দেড় যুগ ধরে টিনের ঝুপড়ি ঘরে চলছে পাঠদান

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে কাটখাল ইউনিয়নের চর কাটখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ভবন নদী ভাঙ্গনের কারণে ২০০৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে ১৬ বছর ধরে ছোট্ট একটি টিনের ঝুপড়ি ঘরে চলছে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠদান। নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট,বিদ্যুত ও সুপেয় পানির সুবিধাও।
তীব্র গরমে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের চর কাটখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ভবন নদী ভাঙ্গনের কারণে ২০০৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। তারপর থেকে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী টিনের ঘরে পাঠদান চালিয়ে আসছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।ভবন সংকট নিরসনে মিলছে না কোনো বরাদ্দ। অস্থায়ী টিনের ঘরে পাঠদান করতে গিয়ে শিক্ষকদেরও নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে শিক্ষাদানে। নেই কোনো শিক্ষা উপকরণ, নেই শিশুদের খেলা-ধুলার সুবিধাও।
আরও পড়ুন: ৪০ কেজি গাঁজাসহ বরখাস্ত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার
১৯৮৯ সালে কাটখাল ইউনিয়নের কালনী নদীর পূর্ব তীরে চর কাটখাল গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় চর কাটখাল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৯৬ সালে নির্মিত ভবনটি কালনী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ায় ২০০৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়। পরে ২০১৯ পর্যন্ত কাটখাল বাজার জামে মসজিদ এলাকায় একটি অস্থায়ী ঘরে ক্লাস পরিচালনা করা হয়। তারপর থেকে পূর্ব চর কাটখাল গ্রামে ২৫ শতাংশ জমিতে ছোট্ট একটি টিনের ঘর উঠিয়ে পরিচালিত হচ্ছে শিশুদের পাঠদান। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘরটিতে আছে ছোট্ট তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও নামমাত্র একটি অফিস কক্ষ। এক কক্ষের শব্দে অন্য কক্ষে পাঠদান করানো দুষ্কর। বারান্দাহীন ঘরটিতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, শিক্ষার্থীদের জন্য নেই টিউবওয়েল ও টয়লেট সুবিধাও। প্রকৃতির ডাক ও পানি খেতে যেতে হয় প্রতিবেশীদের বাড়িতে। শিক্ষার্থীরা জানায়, পাশের স্কুল দেখলে আনন্দ লাগে, কী সুন্দর স্কুল! আর আমাদের ভাঙ্গাচুরা ঘর।
গরমের দিনে পাখা ব্যবহার হয় না, পানিও খেতে পারি না। ঝড়ের দিনে ভয় লাগে। আকাশ মেঘ করলে দৌড়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। শিক্ষকরা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি, তার সাথে এই বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠদানে সমন্বয় করতে পারি না ভবন ও শিক্ষা উপকরণসহ নানা সংকটের কারণে। ২০১৩ সালে জাতীয়করণকৃত এই বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছেন ১৩০ জন শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের আবেদন করেও কোনো সাড়া পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বলেন, বিদ্যালয়টিতে নানামুখী সংকটের কারণে আমরা যে প্রশিক্ষণ পাই, তা শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রয়োগ করতে পারি না।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে যৌথ টহল, নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসাথে মাঠে
সরকার যদি দ্রুত আমাদের ভবনসহ পানি, টয়লেট ও সুন্দর পরিবেশ করে দিতো, আমার ভালোভাবে পাঠদান করাতে পারতাম। কাটখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, বহুদিন ধরে টিনশেড ঘরে পাঠদান করছে শিক্ষকরা। উপজেলা সমন্বয় সভায় ভবন নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করেছি। কেন ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে না, তা জানি না। শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি জানাই। মিঠামইন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান বলেন,এ বিদ্যালয়টির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই সরকারের চর ও হাওরাঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হবে।