ফেরত পাওয়া যাচ্ছে লুট হওয়া মালামাল

বরিশাল ক্লাবের ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা

Any Akter
বরিশাল সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ন, ০৭ অগাস্ট ২০২৪ | আপডেট: ৬:২৩ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নতুন স্বাধীনতা ও বিজয়ের আনন্দ উৎসব মূহুর্তে বরিশালে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে বেশকিছু আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও স্থাপনা। আবার লুটপাট হওয়া অনেক মালামাল ফেরতও দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বরিশালে বেশিরভাগ ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটেছে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার সাথীদেরকে ঘীরে। এদের লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনাময় স্থানগুলোতে খুঁজতে এসে বরিশাল ক্লাবেও ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে একদল অতিউৎসাহী লোক। যাদের বেশিরভাগই বস্তিবাসী। এখানে এসি, ফ্যান, চুলা থেকে শুরু করে রান্নার সরঞ্জাম, এমনকি চুলা ও চামচটি পর্যন্ত নিয়ে গেছে দূর্বৃত্তরা।  

এতে ক্লাবটির প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ইতিমধ্যেই চেয়ার-টেবিল ও হাঁড়িপাতিলের কিছু অংশ ফেরত এসেছে। ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এগুলো পেয়ে ফেরত দিয়ে গেছে বলে জানালেন ক্লাবের কয়েকজন সদস্য। এসময় কয়েকজন জানান, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর পিতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার দলবলকে ইতিপূর্বেও ২০০১ সালে বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ একজন বিএনপি নেতা আশ্রয়-প্রশ্রয় ও নিরাপদে পালিয়ে যেতে দিয়েছিলো। সাদিক আব্দুল্লাহ এর শ্বশুরবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় খোঁজ করা উচিত ছিলো। তা না করে বরিশাল ক্লাব ধ্বংস করেছে দূর্বৃত্তরা। সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার দলবলকে পালাতে এবারেও বিএনপি সহায়তা করেছে বলে মনে করেন অনেকে।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গলাকেটে ও গুলি করে সাবেক ছাত্রদলকর্মীকে হত্যা

ব্রিটিশ শাসনামলে১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয়ান ক্লাবটি পর্যায়ক্রমে বরিশাল ক্লাবে রূপান্তরিত হয়। সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, প্রয়াত মেয়র শওগত হোসেন হীরণের আন্তরিক চেষ্টায় এই ক্লাবটি পর্যায়ক্রমে বর্ধিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হলে পরবর্তীতে বলপূর্বক এটির দায়িত্ব তুলে নেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার কারণেই গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া সংবাদ বরিশালে পৌঁছামাত্র উল্লাসে মাতোয়ারা একদল লোক কালীবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনে এবং বরিশাল ক্লাবসহ আওয়ামী লীগের বেশকিছু ভবনে ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানালেন বরিশাল ক্লাবের অন্যতম সদস্য আসাদুজ্জামান খসরু। ৭ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে বরিশাল ক্লাব ঘুরে দেখা গেছে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য। দ্বিতীয় ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে ভাংচুর করা দোতলা বিশিষ্ট কমিউনিটি সেন্টারটি। এরপর তিনতলা বিশিষ্ট প্রধান ভবন এবং চারতলা বিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া, গোলাম মাওলা কনফারেন্স হল, অফিস রুম এবং 

পাঁচ তলা ভবনের ১৯টি গেস্ট রুম, মিটিং রুম, রিসিপশন এগুলো সব ভাংচুর ও লুটপাট করার পর ক্যান্টিনে এসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নিয়ে গেছে এসি ফ্যান, বিছানার চাদর, বালিশ থেকে শুরু করে চুলা, প্লেট, হাঁড়িপাতিলসহ চামচ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারেক রহমানের কাছে মহিলা দলনেত্রীর আবেদন

ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা এসময় নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপের চেষ্টা করছিলেন। আসাদুজ্জামান খসরু জানালেন, শুধুমাত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর কারণে  আজ এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে হচ্ছে আমাদের। কম হলেও ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

এসময় ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর কয়েকজন শিক্ষার্থী একটি ভ্যানরিকশায় করে টেবিল চেয়ারসহ কিছু আসবাবপত্র নিয়ে আসেন বরিশাল ক্লাবে। তারা জানান, বিজয়ের আনন্দে এখান থেকে কিছু লোক এগুলো নিয়ে গিয়েছিল। কাশিপুর এলাকায় তাদের আটকে এগুলো উদ্ধার করেছে শিক্ষার্থীরা। আমরা আজ এগুলো ফেরত দিয়ে গেলাম।

একইসময় একটি পরিবার কিছু হাঁড়িপাতিল নিয়ে আসেন বরিশাল ক্লাবে। এদিকে নগরীর কয়েকটি বস্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরের মালামাল আসবাবপত্র উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হয়েছে বেলস পার্ক ও শহীদ মিণারের সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটপোস্ট ও রেলিংও।