হৃদরোগকে হারিয়ে শিক্ষকের এক ব্যতিক্রমী বাংলাদেশ ভ্রমণ!

তাজুল ইসলাম, মহিষমারী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু জীবনযাপন, সাহসিকতা আর স্বপ্ন পূরণের পাগলামির দিক দিয়ে তিনি মোটেও সাধারণ নন। বয়স এখন ৫৬। এই বয়সে যেখানে অনেকে শুধুই বিশ্রামে জীবন কাটান, হালকা হাঁটাহাঁটি করেন, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ধীরে চলার চেষ্টা করেন—সেই বয়সে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের প্রায় ৬৪টি জেলা!
নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিলদহর গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম। ১৯৯০ সালে মহিষমারী দাখিল মাদ্রাসায় চাকরিতে যোগ দেন। তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। পারিবারিক জীবনে ৩ সন্তানের জনক। প্রথম পুত্র তারিকুল ইসলাম শুভ, সে কম্পিউটার সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত।
আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
২য় পুত্র তাসনিমুল ইসলাম সুপ্ত যশোর টেকনোলজি পার্কে কর্মরত। একমাত্র মেয়ে তানজিমা ইসলাম সুচি এইচএসসিতে অধ্যয়নরত।
২০১৬ সালে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। তারপর থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ ভ্রমণে নিবেদিত হন। ২০১৭ সালে প্রথম বাইক নিয়ে যমুনা সেতু পারি দেন। তারপর থেকে মনোবল বৃদ্ধি পায়। আর থেমে থাকেননি। ১৭, ১৮ সালে পুরো ঢাকা বিভাগ ঘুরে বেড়ান। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম, ২৩ সালে রাজশাহী ও ময়মনসিংহ, ২৪ সালে বরিশাল, রংপুর এবং ২০২৫ সালে খুলনা বিভাগ ঘুরে বেড়ান।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান
তার ইচ্ছা বাইক নিয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান ভ্রমণ করা। একটি ডিসকভার হোন্ডা নিয়ে তার এই অবিরাম ছুটে চলা অনেকের প্রেরণার উৎস। ছুটির ফাঁকে ফাঁকে বাইক নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ানো তার শখ এবং নেশা।
তিনি একটি ডিসকভার ১০০ সিসি বাইক চালান। এই বাইক দিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিলদহর গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম। তার স্ত্রী ওপেন হার্ট সার্জারি করা একজন মানুষ।
যেখানে অনেকেই বাইক বা ভ্রমণ তো দূরের কথা, হেঁটেই হাঁপিয়ে যান— অথচ রীতিমতো দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে গেছেন বাইক চালিয়ে!
জানা যায়, ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। তখন থেকেই তাঁর ভেতরে ঘোরাঘুরির একটা নেশা কাজ করত। কিন্তু পেশাগত জীবন, সংসার, সন্তানদের দায়িত্ব—এসব সামলে নিজের স্বপ্নকে খুব বেশি সময় দিতে পারেননি। কিন্তু এখন, যখন শরীরের কাছে সবাই হেরে যেতে চায়, তখনই তিনি জিতেছেন।
যখন সবাই বলেন “এখন থেমে যাও”, তখন তিনি বলেন, “এই বয়সেই তো শুরু করার সময়!”
স্কুলে যখনই ছুটি মেলে, ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। কখনো বরিশাল, কখনো কুড়িগ্রাম, আবার কখনো খাগড়াছড়ি। তিনি শুধু জায়গা দেখেন না, মানুষ দেখেন, জীবনকে দেখেন।
অফিশিয়ালি কোনো স্পনসর নেই, কোনো ক্যামেরা টিম নেই, কোনো ভিডিও কনটেন্ট নেই—আছে শুধু একটা বাইক, একটা ব্যাগ আর একরাশ সাহস। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামেও গিয়েছেন বাইকে। বাঁকে বাঁকে পাহাড়ি রাস্তা, ঝুঁকিপূর্ণ ঘূর্ণি—সবকিছু উপেক্ষা করেই তিনি গেছেন রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি আর সাজেকের মতো দুর্গম পাহাড়ি এলাকা।
তার ছেলে সুপ্ত বলেন, “আমি শুধু গর্বিত নই, কৃতজ্ঞ।
আমার বাবা শুধু ঘুরে বেড়ান না। তিনি আমাদের শেখান যে জীবন মানে বয়স নয়, ইচ্ছাশক্তি।
তিনি শেখান, একবার হৃদয় যদি বাঁচতে চায়—তাকে কেউ থামাতে পারে না।
এমন মানুষদের গল্প ছড়িয়ে পড়া উচিত। তারা আমাদের চোখ খুলে দেয়, সাহস দেয়, বাঁচতে শেখায়। সাহসীরা আমাদের মাঝেই আছে—আমরা শুধু দেখতে শিখিনি।
সবাই আমার বাবার জন্যে দোয়া করবেন।”