প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেনসহ ৫ আসামি জেল হাজতে, চার্জশিট দাখিল
লালমনিরহাটে ভুয়া এনজিওর নামে কোটি টাকার প্রতারণা

লালমনিরহাট জেলার আদিতমারীতে ব্যতিক্রম সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড–এর আড়ালে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, প্রতারণা, হামলা, হুমকি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেন (৭৮) সহ মোট পাঁচ আসামিকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
চার্জশিটে নাম থাকা আসামিরা
আরও পড়ুন: সাংবাদিক পরিচয়ে ইয়াবা পাচার করা সেই মুজাহিদ গ্রেপ্তার
১. মো. আনোয়ার হোসেন (৭৮) – সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য
২. মো. রফিকুল ইসলাম (৪২) – ঘনিষ্ঠ সহযোগী
আরও পড়ুন: সিলেটে এবার উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রের দুই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার
৩. মো. রুহুল আমিন (৪০) – আনোয়ার হোসেনের ছেলে
৪. মো. আশরাফুজ্জামান নূর (৩৯) – আনোয়ার হোসেনের ছেলে
৫. নুর হোসেন (৩৪) – পিতা মো. আনোয়ার হোসেন
প্রতারণার কৌশল
তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রাহকদের টাকা সংগ্রহের জন্য ফিল্ড অর্গানাইজার ও কর্মী নিয়োগ করেছিল। গ্রাহকরা ডিপিএস ও ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা জমা রাখলে তাদের হাতে জমার রশিদ ও আমানত সনদ তুলে দেওয়া হতো। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে মুনাফার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল।
বাদিনী মোছাঃ উম্মে কুলসুম—যিনি সমিতির সাপ্টিবাড়ী শাখার ফিল্ড অর্গানাইজার ছিলেন—তার এজাহারে উল্লেখ করেন,
শুধু আমার মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহক মিলিয়ে প্রায় ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা রাখা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আসামিরা টাকা ফেরত ও মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
নির্যাতন ও হামলার ঘটনা
অভিযোগ রয়েছে, টাকা ফেরত চাইতে গেলে গ্রাহকরা হুমকি, মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। বাদিনীকে এক পর্যায়ে বলপ্রয়োগ করে ঘরে আটকে রাখার ঘটনাও চার্জশিটে উঠে এসেছে।
পুলিশি তদন্ত ও আদালতের পদক্ষেপ
আদিতমারী থানার এসআই মোঃ মাহফুজার রহমান আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে উল্লেখ করেন, আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৩২৩/৩৫৪/৫০৬/১১৪/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। আদালত ইতোমধ্যেই ৫ আসামিকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। তবে অন্য আসামিরা এখনও পলাতক।
ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ
অর্থ হারানো গ্রাহকরা চোখের জলে বলেন,“আমরা ভেবেছিলাম এই টাকায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাবো, ঘর তুলবো। কিন্তু প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারালাম। আদালতের কাছে আমাদের দাবি—ন্যায্য পাওনা ফেরত দেওয়া হোক এবং আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের ভাষায়, এমন ভুয়া সমবায় সমিতি ও এনজিওর নামে প্রতারণা দেশের অর্থনীতি ও গ্রামীণ মানুষের আস্থা ধ্বংস করছে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
লালমনিরহাটের এই মামলাটি এখন জেলার আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তদন্ত শেষ হলেও ভুক্তভোগীরা চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, আসামিদের যেন জামিনে মুক্তি না দেওয়া হয় এবং কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী এই চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হয়।