বিহারহাটে হাজার হাজার পাখির নিরাপদ আশ্রয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন

Sanchoy Biswas
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ন, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৫৬ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারহাট ইউনিয়নের বিহার গ্রামটি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যেখানে মানবজাতি এবং পাখির মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অসাধারণ সখ্যতা আর ভালোবাসা। সেখানে হাজার হাজার পাখির নিরাপদ আশ্রয়ের এক সবুজ অভয়ারণ্য হিসাবে গড়ে উঠেছে।

বিহার গ্রামে প্রতি বছর মার্চ মাসে শামুকখোল পাখির ঝাঁক ওই গ্রামে আসে এবং কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম। প্রতি নভেম্বরের শেষে যখন তারা আবার চলে যায়, তখন ওই গ্রামের মানুষের মনে বাজতে থাকে এক বিষাদের করুণ সুর। ওই পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রামের তরুণরা মিলে গড়ে তুলেছে এক অভিনব সবুজ অভয়ারণ্য। উক্ত গ্রামের তরুণদের দাবি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে আরও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন, তাই তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছে।

আরও পড়ুন: রায়পুরায় কাউকেই গ্রীন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বলে দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের

শিবগঞ্জের বিহার গ্রামের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০টি গাছে শামুকখোল পাখিগুলো বাসা বেঁধেছে, যা দেখতে এক বিশাল পাখির রাজত্বের মত দৃশ্য। এই পাখির লম্বা পা এবং বিশেষ আকৃতির ঠোঁট শামুক ভাঙার জন্য খুবই উপযোগী। তবে তারা শুধু খাবারের সন্ধানেই আসে না, তাদের নতুন প্রজন্মকে বড় করার জন্যও এই স্থানটি বেছে নিয়েছে। স্থানীয়দের এই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৭ সালে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বিহারহাটকে "পাখির রাজ্য" হিসাবে ঘোষণা করে।

বিগত ২০১১ সালে গ্রামের একটি বটগাছে কিছু পাখির আগমনের মধ্য দিয়ে এই গল্পের সূচনা হয়। প্রথম দিকে পাখির অবাধ বিচরণ এবং বিষ্ঠায় বিরক্ত হলেও ধীরে ধীরে এলাকাবাসী তাদের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করে এবং সখ্যতা গড়ে ওঠে। এভাবেই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই সম্পর্ক, মানবজাতি আর পাখির মধ্যে ভালোবাসার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই গ্রামের গল্প শুধু একটি অভয়ারণ্যের নয়, বরং প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি মানুষের গভীর মমতা আর ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়। অপরদিকে শিকারিদের থেকে পাখিদের রক্ষা করতে স্থানীয় তরুণরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যা এই অভয়ারণ্যকে আরও সুরক্ষিত করে তোলে। জোড়ায় জোড়ায় থাকার কারণে এই পাখিদের "মানিকজোড়" নামেও ডাকা হয়। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার শামুকখোল পাখি এই গ্রামে বসবাস করছে। এই শামুকখোল পাখির আগমনের পর থেকেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সক্রিয় হয়। তারা মানুষকে পাখি শিকারের ক্ষতিকর দিক এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। তাদের এই প্রচেষ্টায় গ্রামবাসীও শামিল হয় এবং খুব দ্রুতই পাখির নিরাপত্তা তাদের নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় গ্রাম পুলিশদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক

এতে বিহারহাট গ্রামের রুবেল হোসেন জানান, আমাদের এমন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে গেছে যে, বাইরে থেকে কেউ পাখি ধরতে বা মারতে আসলে আমরা তাদের বাধা বা নিষেধাজ্ঞা প্রদান করি। বিহারহাট গ্রামের আরও একজন তরুণ সাগর আহমেদ জানান, এখন এই গ্রামের মানুষ এতটাই সচেতন যে, কোনো পাখি নিচে পড়ে গেলেও তারা সেটিকে স্পর্শ করে না। এই শামুকখোল পাখি দেশীয় হলেও তারা যাযাবর শ্রেণীর। বছরে প্রায় ৯ মাস তারা এই গ্রামে কাটায়, আর বাকি সময় খাবারের খোঁজে বিল অঞ্চলে চলে যায়।

এ বিষয়ে বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান জানান, এই শামুকখোল যেহেতু লোকাল মাইগ্রেটরি পাখি। মাইগ্রেটরি পাখি হচ্ছে যাযাবর পাখি, ওরা যাযাবরের মতো ঘুরবে। কোথাও তাকে স্থির রাখা যাবে না। সেহেতু এ মুহূর্তে আমরা যেটা মনে করি, বিহারে যেটা আছে সেটা অনিরাপদ না। তবে বিষয়টা আমরা আরও গুরুত্বসহকারে দেখবো বলে জানান তিনি।

এছাড়াও শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, বিহারহাটে শতবর্ষী গাছের ডালে ডালে গড়ে উঠেছে শামুকখোল পাখির এক নিরাপদ অভয়ারণ্যের রাজ্য হিসাবে। এসব পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিকারিদের তৎপরতা রুখতে পাখি শিকারিদের দেখলেই দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিহারহাট ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।