জৈন্তাপুরে লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্য কেড়ে নিচ্ছে কচুরিপানা
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ডিবিরহাওড় লাল শাপলা বিল। সাধারণত পর্যটন মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত লাল শাপলা প্রাকৃতিক ভাবে ফুটে। সেই সাথে সারাদেশে ভ্রমন পিপাসু মানুষের নিকট জৈন্তাপুর ডিবির হাওড় লাল শাপলা বিল ইতিমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
তবে চলতি বছরে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে লাল শাপলা বিলে প্রাকৃতিক এক বিপত্তি দেখা দিতে শুরু করেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ডিবিরহাওড় এলাকায় সংরক্ষিত চারটি বিল ডিবি বিল, কেন্দ্রীবিল,ইয়ামবিল ও হরফকাটাবিলের বিশাল অংশ জুড়ে গজিয়ে উঠেছে কচুরিপানা।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে কালকিনিতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ১ জনকে কুপিয়ে যখম
দেখে মনে হয়,লাল শাপলা বিল অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কচুরিপানার রাজ্যে পরিনত হতে যাচ্ছে। ২০১৪/১৫ সালের দিকে জৈন্তাপুর ফটোগ্রাফি সোসাইটির মাধ্যমে অপার সম্ভাবনার এই প্রাকৃতিক পর্যটন সৌন্দর্যের লীলাভুমি ডিবির হাওড় লাল শাপলা বিল সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের নজরে আসে।
ধীরে ধীরে শুরু হয় লোকসমাগম। এক পর্যায়ে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই স্হানটিকে পর্যটন স্পট করে তুলতে নেয়া হয় কার্যকর পদক্ষেপ। একে একে শুকনো মৌসুমে বিলের পানি ধরে রাখতে বিশাল এরিয়া নিয়ে দেয়া হয় বাঁধ। পাশাপাশি বিশ্রামগার, শৌচাগার স্হাপন করা হয় এবং দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ওয়াকওয়ে।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুর-১ আসনে গণ অধিকার পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট ফিরোজের নির্বাচনী প্রচারণা
শীতকালে শাপলা মৌসুমে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের মৌলিক সুবিধা ও বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে গঠন করা হয় শাপলা বিল সুরক্ষা কমিটি। এই বিলের অন্যতম আরেকটি স্পট রাজা বিজয় সিংহের সমাধীর পুরাকীর্তি। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এই পুরাকীর্তি সংরক্ষণে নেয়া হয় কার্যকর পদক্ষেপ।
সেই সাথে ডিবিরহাওড় লাল শাপলা বিল এলাকায় বৃক্ষ না থাকায় সবুজের সমারোহ ও দর্শনার্থীদের ছাড়াঘেরা পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিলের বিশাল এলাকা জুড়ে তরুছায়া সামাজিক বনায়নের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে ২০২৫-২৬ পর্যটন মৌসুমে তরুছায়া সামাজিক বনায়ন দৃশ্যমান হওয়া শুরু করেছে। যা ডিবিরহাওড় লাল শাপলা বিল এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তী আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে।
এর পাশাপাশি গত মৌসুমে তামাবিল মহাসড়ক থেকে লাল শাপলা বিল স্পট পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটি সংস্কারের আওতায় আনা হয়েছে সেই সাথে ব্যবস্হা করা হয়েছে সুবিশাল কার পার্কিং এর।
ডিবির হাওড় লাল শাপলা বিলের ক্রমাগত এই উন্নয়নে বিপরীতে সৌন্দর্য গিলে খেতে বসেছে কচুরিপানা। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইয়ানবিলের ৬৫ শতাংশ জুড়ে শুধু কচুরিপানা। এছাড়াও ডিবিরহাওড় লাল শাপলা বিলের প্রবেশমুখের দুইপাশে বিলের অংশে কচুরিপানা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। গত ২০২৪/২৫ মৌসুমে বিলের একটি অংশে উঁচু দ্বিপের মত সৃষ্টি হলে সেখানে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সরিষা চাষ করা হয়েছিলো। যার ফলে চারপাশে লাল শাপলার মাঝে হলুদ সরিষার সমারোহ বাড়তি আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছিলো। কিন্তু বর্তমানে এই অংশটিতে শুধু কচুরিপানায় ভরপুর।
এছাড়াও মূল ডিবিবিল এলাকা যেখানে পর্যটকরা নৌকায় উঠে রাজার সমাধি এলাকায় ভ্রমণ করেন তার উত্তর প্রান্তে বড় এলাকাজুড়ে কচুরিপানা জন্মেছে।
লাল শাপলা বিলে স্বপরিবারে বেড়াতে আসা সিলেট নগরীর দর্শনদেউড়ী এলাকার ইতালি প্রবাসী মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ বলেন, ছাত্রজীবনে জাফলং এলাকায় একাধিক বার ঘুরতে এসেছিলেন। তিনি জানান, প্রবাসে থেকে ডিবিরহাওড় লাল শাপলা বিলের অনেক ভিডিও ও কনটেন্ট নিয়মিত দেখে লাল শাপলা বিল বেড়ানোর জন্য ইচ্ছা জাগে। তিনি দেশে এসে প্রথমবারের মতো লাল শাপলা বিল আসেন। প্রথমে গাড়ী থেকে সাদা সাদা ফুল দেখে মনে করেছিলেন শাপলাফুল হয়তো নতুন ফোটার পূর্বে সাদা হয়। কিন্তু কিছু দূর যেতেই তার ধারণা পাল্টে যায়। তিনি বুজতে পারেন এই সাদা ফুলগুলো কচুরিপানার ফুল। এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, লাল শাপলা দেখতে এসে বাড়তি দেখা হিসেবে কচুরিপানা দেখে গেলাম।
এ বিষয়ে ডিবির হাওড় লাল শাপলা বিল সুরক্ষা কমিটির সভাপতি সাইফুল আহমেদ বলেন, বিগত সময়ে বিলে এতো বেশী কচুরিপানা দেখা যায় নাই। এ বছরই হঠাৎ এই সমস্যার দেখা মিললো। তিনি দাবী করেন সুরক্ষা কমিটিতে যথেষ্ট বাজেট ঘাটতি রয়েছে। গত মৌসুমে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও কিছু উন্নয়নমুলক কাজের টাকা এখনো বাকি থেকে গেছে। তিনি জানান কচুরিপানা অপসারণ করার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সুরক্ষা কমিটি,নৌকার মাঝি,ক্যামেরাম্যান সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে পর্যটন মৌসুমে সেবা নিশ্চিত করতে বৈঠকের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু কচুরিপানার এই সমস্যাটি সেদিন কেউ তুলে ধরে নি। তিনি আরো বলেন শাপলাবিল সুরক্ষা কমিটি এই দায়িত্ব পালন করার কথা। তাছাড়া লাল শাপলা বিল সুরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে আয় ব্যায়ের কোন সুনির্দিষ্ট হিসাবও দেয়া হয় নি। এ ব্যপারে অতিসত্বর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি কচুরিপানা অপসারণে দ্রুত ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।





