দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া, ‘ত্যাগ, নির্যাতন ও আপোষহীনতার অনন্য প্রতীক’

Sanchoy Biswas
এম এফ ইসলাম মিলন
প্রকাশিত: ৮:৩০ অপরাহ্ন, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৩১ পূর্বাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপোষহীনতা, রাজপথের সংগ্রাম, ক্ষমতার অন্ধকারে মাথা নত না করা- এই শব্দগুলো একসময় পুনরাবৃত্তি হতো এক নামকে ঘিরে: কর্পোরেট শক্তি, স্বৈরাচার ও দুঃশাসনের সামনে মাথা না নোয়ানো নেত্রী খালেদা জিয়া।

আজ এই বয়স্ক, অসুস্থ নেত্রী যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে- তখন রাজনীতির খণ্ডিত বিভাজন ভুলে দেশের সাধারণ মানুষ আরও একবার স্মরণ করছে তাঁর দীর্ঘ ত্যাগ ও রাজনৈতিক দৃঢ়তাকে।

আরও পড়ুন: বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে বন্দর চুক্তি: জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে প্রয়োজন দূরদর্শী বাস্তবতা

একজন নারীর সাংসারিক সংগ্রাম থেকে জাতীয় নেতৃত্বে- ত্যাগের এক দীর্ঘ পথ!

স্বামী, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনামলের ধাক্কা সামলে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন চরম অনিশ্চয়তা ও ভয়ের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণের বাইরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ‘অচল’ হওয়ার শঙ্কায় নগরবাসী

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার-সেনা শাসন, কর্তৃত্ববাদী শক্তি, প্রশাসনিক প্রভাব- এসবের মুখোমুখি হয়েও তিনি রাজপথের আন্দোলনে নারীর নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

তিনি যখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন- তখন তাঁর চারপাশে ছিলো: গুলি, গ্রেপ্তারি আতংক, হামলা, দমননীতি, মামলা, কিন্তু তিনি পিছিয়ে যাননি।

এ কারণেই তাকে বলা হয়- "গণতন্ত্রের আপোষহীন প্রতীক।"

নির্যাতনের ঘোর অন্ধকারে থেকেও মাথা নত না করার ইতিহাস:

রাজনীতিতে ভিন্নমত দমনে রাষ্ট্রযন্ত্র যখন কঠোর হয়- তখন সবচেয়ে বেশি আঘাত আসে বিরোধীদলীয় শীর্ষ নেতাদের ওপর। খালেদা জিয়া সেই আঘাতের বড় অংশ নিজের কাঁধে নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের যে অধ্যায়গুলো মানুষকে কাঁদিয়েছে-

১. দীর্ঘদিন গৃহবন্দিত্ব:

আইন-আদালতের নামে বারবার গ্রেপ্তার, গৃহবন্দিত্ব ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা- গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটি এক ভয়াবহ নজির হয়ে আছে।

২. মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক হয়রানি:

দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে শুরু করে থানা-আদালত- সর্বত্র শত শত মামলা দিয়ে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে।

৩. সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা:

শারীরিক জটিলতা, বয়সজনিত রোগ, লিভার সমস্যা- সব থাকলেও বছরের পর বছর তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়- মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন।

৪. পরিবারের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস:

তাঁর দুই সন্তান- আরাফাত রহমান কোকো ও তারেক রহমান- দুজনকেই রাজনৈতিক হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কোকোর মৃত্যু তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত শোক- যা আজও জাতিকে ব্যথিত করে।

আপোষহীনতা- যা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।খালেদা জিয়া রাজনীতিতে কত বড় আপোষহীন ছিলেন- তা বোঝা যায় তিনটি ঘটনার মাধ্যমে;

১. ক্ষমতার বিনিময়ে আপোষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান:

১/১১ র সেনা সমর্থিত রাষ্ট্রশক্তির কাছ থেকে নানাভাবে চাপ, প্রলোভন, শর্ত- সবকিছুই তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। গণতন্ত্রের বিপরীতে কোনো সমঝোতা তিনি করেননি।

২. দল ও মতাদর্শ রক্ষায় কঠোরতা:

ক্ষমতার লোভে দল ভাঙা, মতাদর্শ পরিবর্তন- এসব কখনোই করেননি।

অনেকেই বলতেন-“তিনি যদি নরম হতেন, ব্যক্তিগত জীবন সহজ হতো”কিন্তু তিনি সহজ পথ বেছে নেননি।

৩. আন্দোলনের ময়দানে শেষ বয়সেও নেতৃত্ব:

বয়স, অসুস্থতা, মামলা, জেল- কিছুই তাঁকে থামাতে পারেনি। রাজপথের আন্দোলনে এখনো তাঁর নামই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়।

আজ তিনি যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন- রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবতার জয় হোক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকতে পারে- কিন্তু মানবতা কখনো বিভক্ত হওয়ার বিষয় নয়। একজন বয়স্ক, গুরুতর অসুস্থ নেত্রীকে নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা নিষ্ঠুরতা দেশের চরিত্রকে ম্লান করে।

আজ তাঁর চিকিৎসা, তাঁর সুস্থতা ও মানবিকভাবে অবস্থার উন্নতি- এগুলোই হওয়া উচিত জাতির প্রত্যাশা।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অবদান- যা অস্বীকার করা যায় না। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি তিনবার দেশ পরিচালনা করেছেন।

অর্থনীতি মুক্তবাজার ব্যবস্থায় এগিয়ে নেয়া, পোশাক শিল্প ও রপ্তানিমুখী অর্থনীতির স্থপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, গ্রামীন বিদ্যুতায়নের রূপান্তর, শিক্ষা- স্বাস্থ্য অবকাঠামো সম্প্রসারণ, দলকে দুর্যোগ, আঘাত ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ রাখা। এই অবদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে।

শেষ কথা- বাংলাদেশ তাঁকে আবার উঠে দাঁড়াতে দেখতে চায়, আজ যখন তিনি হাসপাতালের বিছানায়- তখন রাজনীতি ভুলে একটি জাতি তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে।

কারণ তিনি শুধু একটি দলের নেত্রী নন- তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জীবন্ত ইতিহাস। 

আমরা চাই- তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন, তিনি যেন ন্যায্য সম্মান পান আর সকল দল-মত মানবিকতার মূল্যবোধে আবারও ফিরে আসুক।

লেখক: এম এফ ইসলাম মিলন, ব্যবসায়ী ও কলামিস্ট