রাষ্ট্র ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে

অনিশ্চয়তা, অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, সরকারি প্রশ্রয় ও আইনহীনতায় বাংলাদেশ দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবমান

Any Akter
এম এ মতিন
প্রকাশিত: ৪:২৪ অপরাহ্ন, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:৩২ অপরাহ্ন, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

একটি জাতির ইতিহাসে এমন মুহূর্ত আসে যখন নীরবতা অপরাধে রূপ নেয়, দ্বিধা দায়ে পরিণত হয় এবং নেতৃত্বের ব্যর্থতা জাতিকে সরাসরি বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশ আজ ঠিক সেই অন্ধকার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যে পরিস্থিতি দেখছি তা সাধারণ কোনো প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়এটি সুসংগঠিত, পরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক দুর্নীতি, অপরাধী-রাজনীতি, অব্যবস্থা ও সরকারি অদক্ষতার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। দেশ আজ ঝুলে আছে এক অদৃশ্য দড়ির ওপর, যেখানে ভুল সিদ্ধান্ত, বেআইনি নির্দেশ, উদ্দেশ্যহীন কর্মধারা ও রাজনৈতিক নোংরামি মিলেমিশে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া, ‘ত্যাগ, নির্যাতন ও আপোষহীনতার অনন্য প্রতীক’

বাংলাদেশ কেবল অস্থির নয়বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে বন্দর চুক্তি: জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে প্রয়োজন দূরদর্শী বাস্তবতা

অনিশ্চয়তার রাজত্ব: দিকহীন নেতৃত্ব, ভেঙে পড়া প্রশাসন

আজ দেশের সবচেয়ে বড় পরিচয়অনিশ্চয়তা।

কোনো সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়, কোনো নীতি স্থিতিশীল নয়, কোনো পদক্ষেপ যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে নেই। আইন ও সংবিধানকে উপেক্ষা করে নেওয়া বেআইনি সিদ্ধান্ত এখন রীতিমতো স্বাভাবিক ঘটনা। নেতৃত্বের উদ্দেশ্যহীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশের ভবিষ্যৎ যেন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি কার্যক্রমে দিকনির্দেশনার সম্পূর্ণ অভাব আজ প্রকাশ্য সত্য। কে কী করছে, কেন করছে, কোন স্বার্থে করছেকোনো স্পষ্টতা নেই।

এটাই পতনের প্রথম লক্ষণ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বেকারত্ব: জাতির শ্বাস রুদ্ধ হওয়ার পর্যায়

রাজনৈতিক অস্থিরতা এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা। সংঘর্ষ, বিক্ষোভ, হামলা, ধাওয়াপাল্টা ধাওয়াসবকিছুই আজ স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শ্রমজীবীসকলেই এই বিশৃঙ্খলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।

বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে। তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভঅনিশ্চয়তা তীব্র হয়ে উঠছে

কিন্তু সরকার?

তারা যেন অন্য জগতে বাস করছেমাঠের বাস্তবতা নয়, নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধাই তাদের একমাত্র চিন্তা।

সরকারি উপেক্ষা ও প্রশ্রয়ে সহিংসতার বিস্তার:

সবচেয়ে বিপজ্জনক ঘটনাটি হলোযে অপরাধটিকে সরকার দেখেও দেখে না।

যে দোষীরা রাজনৈতিকভাবে “গুরুত্বপূর্ণ,” তাদের অপরাধ সরকার এড়িয়ে যায়, সরাসরি উপেক্ষা করে বা রাজনৈতিকভাবে ঢেকে রাখে

ফলাফল?

অপরাধীরা আরও শক্তিশালী হয়

দুর্বৃত্তরা জানেতাদের কিছু হবে না

এভাবে রাষ্ট্র নিজ হাতে নিজের শত্রু তৈরি করছে

দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতিএক ভয়ংকর দৈনন্দিন বাস্তবতা

দুর্নীতি আজ রাষ্ট্রের রক্তস্রোতচাঁদাবাজি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি এখনখোলা বাণিজ্য।”

যারা সন্ত্রাস করে, তারা করে রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে; যারা আইন মেনে চলতে চায়, তাদেরই হয়রানি করা হয়।

এ এক বিকৃত বিচারব্যবস্থা

যেখানে অপরাধীরাই নিরাপদ, আর সাধারণ মানুষ সর্বদা বিপদে।

অযোগ্য, দ্বিধাগ্রস্ত ও সিদ্ধান্তহীন নেতৃত্ব: রাষ্ট্রের সর্বনাশের বীজ

যে নেতৃত্ব সংকটে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সে নেতৃত্ব জাতিকে রক্ষা করতে পারে নাআজ সরকারি স্তরে যে ধরনের সিদ্ধান্তহীনতাঅযোগ্যতা দেখা যায়, তা কেবল হতাশাজনক নয়এটি রাষ্ট্র ধ্বংসের প্রক্রিয়া

আরও বিপজ্জনক হলোসরকার একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অপরাধকে উদাসীনভাবে ঢেকে রাখছে, ভিতরে ভিতরে সমর্থন দিচ্ছে, সাফাই দিচ্ছে

একদিকে অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা, অন্যদিকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তাসংমিশ্রণ কোনো রাষ্ট্রকেই দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে পারে না

আইনহীনতাপক্ষপাতদুষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী: ভেঙে পড়া রাষ্ট্রের স্পষ্ট চিহ্ন

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হওয়ার কথা ছিল জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া।

আজ তারা অনেক সময় কাজ করে উল্টোভাবে

সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে, আর রাজনৈতিক অপরাধীদের পক্ষে।

সরকারপ্রিয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত একদল রাষ্ট্রীয় যন্ত্রএটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

এভাবে গড়ে ওঠে দুই ধরনের আইন:

এক আইন সাধারণ মানুষের জন্য,

আরেক “আইনহীন আইন” রাজনৈতিক বাহুবলের জন্য।

সরকারি নীরবতা ও সহযোগিতায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের উত্থান:

আজ দেশজুড়ে যে সন্ত্রাস চলছে, তা স্বতঃস্ফূর্ত নয়

এটি সরকারি নীরবতা ও সমর্থনে পুষ্ট।

চাঁদাবাজি, হামলা, ভয়ভীতি, দখলদারি, আইনভঙ্গ, গণহয়রানিকোন অপরাধটি তারা করেনি?

সবই করছে, আর করছে সরকারের ছায়া-বর্মের ভরসায়।

সরকারের নীরবতা মানে সম্মতি।

আর সম্মতির মানেঅপরাধীদের হাতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ দেওয়া।

একটি ভয়ংকর সতর্কবার্তা: বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগোচ্ছে

একটি রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যায় যখন:

সিদ্ধান্তহীনতা নিয়মে পরিণত হয়

আইন থাকে বইয়ে, বাস্তবে থাকে না

রাজনৈতিক অপরাধীরা রাষ্ট্রের ওপরে উঠে যায়

বিচারব্যবস্থা হারায় নিরপেক্ষতা

জনসাধারণ হারায় আস্থা

সরকার জনগণ নয়, অপরাধীদের রক্ষা করে

আজ বাংলাদেশে এগুলোর প্রতিটি লক্ষণ স্পষ্ট।

এই বাস্তবতা ভয়ংকর।

এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের অগ্রাভাস।

এখনই কঠোর সংস্কারনইলে ধ্বংস অনিবার্য:

দেশকে বাঁচাতে হলে জরুরি ভিত্তিতে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে হবে:

অপরাধী-রাজনীতি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বাধীনতা নিশ্চয়তা

রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অপরাধে শূন্য সহনশীলতা

নেতৃত্বে দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও সাহস

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা পুনঃস্থাপন

নির্বাচন ও রাজনীতিতে কঠোর মানদণ্ড

সরকারি পক্ষপাত ও সন্ত্রাসী রক্ষার সংস্কৃতি নির্মূল

সংস্কার আর বিলাসিতা নয়এটি এখন জাতীয় জরুরি অবস্থা।

উপসংহার: পতনের আগে শেষ ডাক

বাংলাদেশ আজ এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যেখানে ভুল সিদ্ধান্ত, আইনহীনতা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং সরকারি প্রশ্রয় একসঙ্গে রাষ্ট্রটিকে গিলে খাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে, হতাশায় এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অপরদিকে অপরাধীরা রাজনৈতিক বৈধতার নামে আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

যদি সরকার এখনো নীরব থাকে, যদি তারা অপরাধীদের ঢেকে রাখে, যদি তারা বেআইনি কার্যকলাপকে সমর্থন করেতাহলে সেই অশুভ ভবিষ্যআর প্রতিরোধ করা যাবে না:

বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে

এটাই শেষ সতর্কবার্তাএখনই পরিবর্তন না হলে আগামী প্রজন্মের জন্য কিছুই বাকি থাকবে না।