চবিতে প্রক্টর অফিসেই ভুক্তভোগীকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে অভিযুক্ত মাহফুজ শুভ্র পক্ষের মব সৃষ্টি

Sanchoy Biswas
মো. সাবিত বিন নাছিম, চবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:০৭ অপরাহ্ন, ২১ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৮:০৫ অপরাহ্ন, ২১ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গত ১৪ই আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়টির দৈনিক দিনকাল ও ইত্তেফাকের সংবাদদাতা আল ইয়ামিম আফ্রিদি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অসঙ্গতি এবং এতে জামায়াতের দলীয় প্রভাব প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশের পর, একটি কুচক্রী গুপ্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও চবির সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চবির অর্থনীতি বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মাহফুজ শুভ্র একটি বানোয়াট কল রেকর্ড দিয়ে এবং সাক্ষ্য কে ভয় ভীতি দেখিয়ে সত্য লুকিয়ে ভুক্তভোগীর সম্মানহানির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে তাকে হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। অভিযোগপত্রের প্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে প্রক্টর অফিসে ডাকা হয়। আর সেখানেই ভুক্তভোগী ঐ সংবাদদাতাকে অভিযুক্ত মাহফুজ শুভ্রের পক্ষের চবিসাসের সদস্য পরিকল্পিতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা ও মব তৈরি করে। উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী সংবাদদাতা চবিসাসের সদস্য নয়। 

ঐ দিন প্রক্টর অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সহ উপস্থিত ছিল অন্যান্য সহকারী প্রক্টরবৃন্দ এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার সাথে গুটিকয়েক অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ শুভ্র ও তার পক্ষের চবিসাসের সদস্য সহ অন্তত ডজন খানেক লোক। অভিযোগ নিয়ে যেখানে কথাবার্তা হওয়ার কথা প্রক্টরবৃন্দ ও ভুক্তভোগী-অভিযুক্তের মধ্যে সেখানে প্রথম থেকেই অভিযুক্ত মাহফুজ শুভ্রের লোকেরা নানান ভাবে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছিল। 

আরও পড়ুন: ডাকসুতে তন্বীর সম্মানে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদটি খালি থাকবে: ছাত্রদল

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আফ্রিদি তার অভিযোগে উল্লেখিত সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করলেও প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ তা অস্পষ্ট ও বোঝার মতো না বলে মন্তব্য করেন। পুরোটা সময়ই প্রক্টর অভিযুক্তের পক্ষেই সায় দেন বেশি এবং সেই পক্ষের উস্কানি মূলক ব্যক্তিগত আক্রমণ কেন্দ্রীক কথাবার্তার প্রতিও ছিল তার নিরবতা ৷ এরই মধ্যে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অভিযুক্ত মাহফুজ শুভ্রের পক্ষের চবিসাসের সদস্যরা নানাভাবে উস্কানিমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালাতে থাকে এবং উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও তার পক্ষের শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও মানসিক ভাবে চাপ দিতে থাকে। একই সাথে এমন কিছু দাবির প্রমাণও তারা জোর করে চাইতে থাকে যা ভুক্তভোগীর অভিযোগে দাবিও করা হয়নি। 

এক পর্যায়ে অভিযুক্ত মাহফুজ শুভ্রের পক্ষের চবিসাসের সদস্য ভুক্তভোগী কে সরাসরি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে মব তৈরি করে। এবং অভিযুক্ত পক্ষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং তারা এক সময় সম্মিলিতভাবে দুয়োধ্বনি দেয়। এই ভিত্তিহীন ট্যাগের প্রতিবাদ সাথে সাথেই ভুক্তভোগী ও তার সাথের গুটিকয়েক শিক্ষার্থীরা করে উঠলেও, অভিযুক্ত পক্ষের ডজনখানেক লোকের রোষানলের সাথে তারা পেরে উঠতে পারেনি। এবং তাৎক্ষণিক ছাত্রলীগের ট্যাগ দেওয়ার পর ভুক্তভোগী পক্ষের দিকে অভিযুক্ত পক্ষ আক্রমণাত্মকভাবে তেরে আসলে মবে শারীরিক আক্রমণ থেকে বাঁচতে উক্ত পরিস্থিতিতে প্রক্টর অফিসেই নিরাপত্তার অভাবে ভুক্তভোগী ও তার সাথের শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। তবে এমন উত্তপ্ত পরিস্তিতেও জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রক্টরিয়াল বডি ছিল নির্বাক, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি করেছে ব্যাপক সমালোচনা। এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রক্টরিয়াল বডি নির্বাক হয়ে মব সৃষ্টিকারীদের সুস্পষ্ট ভাবে এক্সেস না দিলে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। সর্বোপরি প্রক্টর অফিসে এমন ভাবে সম্মেলিত ভাবে ভুক্তভোগীকে ট্যাগ ট্যাগীং দিয়ে মব তৈরি করে চাপ প্রয়োগ করা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলকেই স্মরন করিয়ে দায়। 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা

উল্লেখ্য, বিগত সরকার আমলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে যৌক্তিক এ্যালটমেন্ট নিয়ে ছাত্রদের হলে অবস্থান করা দুরূহ ব্যাপার ছিল। তোখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রলীগের নানান বগি ভিত্তিক উপ গ্রুপ এবং চবিসাসের সদস্যরা সাংবাদিক পরিচয়ে হলে থাকতেন। ঐ সময়কালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী একজন সংবাদদাতা হিসেবে চবিসাসের সদস্য না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকের সুপারিশে হলে অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পট পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয় এবং এই ট্যাগ ব্যবহার করে ইতিপূর্বেই দেশের নানান জায়গায় মব তৈরি করাও হয়েছে যেখানে নিরীহ ব্যক্তিদের প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের পক্ষে চবিসাসের সদস্য কর্তৃক ভুক্তভোগীর উপর এরূপ প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের ট্যাগ দেওয়া সুস্পষ্টই ভাবেই মব সৃষ্টি ও প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করে। 

ঐ দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির এক সংবাদদাতা ও শিক্ষার্থী নাঈম হোসেন দুর্জয় এ বিষয় জানান, “প্রথম থেকেই আমি দেখি মাহফুজ শুভ্র ও তার দল (চবিসাসের সদস্য) নানাভাবে ভুক্তভোগীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এবং এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী (আফ্রিদি) কে মবের মুখে ধাবিত করতে চবিসাসের সদস্য সরাসরি তাকে ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে মারমুখী হয়ে উঠে। এবং সেখানে প্রক্টরিয়াল টিম তামাশা দেখতে ছিল।”

ঘটনার দিন প্রক্টর অফিসে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক সংবাদদাতা ও শিক্ষার্থী সোয়াদ সাদমান জানান, “প্রক্টরিয়াল বডির কথায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সেখানে গেলে, কিন্তু তারা তাকে মবের মুখে একা ছেড়ে দিলো। যখন তাকে (ভুক্তভোগী) ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আক্রমনাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করা হলো তোখনও প্রক্টর স্যার যেন নিরুপায়। আমিও প্রায় ৩/৪ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম, এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর টিম ভুক্তভোগী হিসেবে আমাকে এবং অভিযুক্তকে একবারের জন্যও ডাকিনি এবং প্রমাণ থাকার সত্ত্বেও আমি এখনো কোন বিচারও পাইনি। এখনে অবশ্যই প্রশ্ন ওঠে প্রক্টরিয়াল টিম কি সবার নাকি প্রভাবশালী গুটিকয়েকের জন্য?”

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সংবাদদাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী আল ইয়ামীম আফ্রিদি জানান, “ঐ দিন প্রক্টর অফিসে সংঘবদ্ধ হয়ে আমাকে যেভাবে হেনস্তা ও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে মব তেরির পায়তারা করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছি। আমি আমার অভিযোগে উল্লেখিত প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। তবুও ঐ দিন আমাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে মবের যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল তাতে আমি নিরাপদ বোধ করছিলাম না এবং নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার আশাও আমি ছেড়ে দিয়েছি। যেখানে চবিসাসের অনেক সদস্য সাংবাদিক পরিচয়ে কোন অ্যালটমেন্ট ছাড়া ফ্যাসিস্ট আমলে হলে থাকত তাতে তারা ছাত্রলীগ না কিন্তু আমি শিক্ষকের সুপারিশে হলে ছিলাম তাতেই মব তৈরি করার জন্য আমাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দেওয়া হয়েছে।” এসময় তিনি তার শিক্ষাগত ও জীবনের আশঙ্কা নিয়ে জানান, “আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার মনে হয় না আমি সুস্থ ভাবে আমার শিক্ষাগত জীবন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ করতে পারবো।” 

এই বিশৃঙ্খলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফকে গণমাধ্যম থেকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। 

তবে সর্বোপরি, জুলাই পরবর্তী সময়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়টির সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী কারোরই কাছে কম্য নয়।