বানোয়াট রেকর্ড দিয়ে হেনস্তা, চক্রান্তে গুপ্ত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও সাংবাদিক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ বিরোধী মতাদর্শের গুপ্ত রাজনৈতিক সংগঠনের মদদে বানোয়াট রেকর্ড ব্যবহার করে সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়টির দৈনিক দিনকাল ও ইত্তেফাকের সংবাদদাতার। গত ১৪ই আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন বরাবর ভুক্তভোগী সংবাদদাতা আল ইয়ামিম আফ্রিদি অভিযোগ করেন, তার সম্মানহানির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একটি রাজনৈতিক গুপ্ত কুচক্রী মহল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ শুভ্র।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অসঙ্গতি এবং জামায়াতের দলীয় প্রভাব প্রসঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশের পর, একটি কুচক্রী গুপ্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও মাহফুজ শুভ্র সম্মিলিতভাবে একটি বানোয়াট কল রেকর্ড দিয়ে ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিককে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত কল রেকর্ডের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এমনকি রেকর্ডটি যে জাল, তা তৈরিকারী ও মাহফুজ শুভ্র দুজনই স্বীকার করেছেন। এবং পরবর্তীতে সাক্ষীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বক্তব্য পরিবর্তনের চাপ দিয়েছে ঐ গুপ্ত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ খোদ মাহফুজ শুভ্র। উক্ত ঘটনার সত্যতায় একটি অডিও রেকর্ডও পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৫৬৫ জন, হল সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ২২৬ জন
অডিও রেকর্ডটিতে শোনা যায় ভয়-ভীতির সহিত মাহফুজ শুভ্র সাক্ষী কে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “আপনার নাম নিউজে আসতোই না, এখন আপনার নাম নিউজে আসবে কারন এ বিষয়ে জড়িত আছেন। এটা আফ্রিদিরে বানাইতে চাইছে, এটা নাটক। আফ্রিদি এখানে কোন বেস না, আফ্রিদি কোট ওকে সেভ করার সুযোগ নেই।” তাকে আরও বলতে শোনা যায়, “আপু আপনাকে দিয়া নাটক (কল রেকর্ড) করাইছে যাতে আফ্রিদি কট খাবে এর জন্য। আপনার না হলে আপনাকে সেভ দেওয়া যাইতো কিরকম জানেন, আপনি যে কনফেস করছেন না তোহন ধরেন এইটা সত্যি যেটা আপনার না হইতো তাহলে আপনি বলতেন যে, আমারে আফ্রিদি বলতে বলছিলো বইলা আমি বলছি সহজ কথা।” শেষে স্বীকারোক্তি দেওয়া সাক্ষী কে তার বয়ান থেকে অস্বীকার যেতে বলে মাহফুজ শুভ্র কে আরও বলতে শোনা যায়, “ঐ নিউজে আপনার নামই আসতো না, আফ্রিদি বিষয় টা যে ডিনাই করছে এই নামটা আপনার কাছে আসতোই না। আপনার নাম ঐখানে আসতোই না, কেন ঐখানে তো আমার কাছে এভিডেন্স আছে যে আফ্রিদি যদি চ্যালেঞ্জ করতে জাইতো তোহন আপনার বক্তব্য আমার কাছে আছে। তোহন আমার হয়তো শো করার লাগতো। কিন্তু আফ্রিদির হইতো (কল রেকর্ড) তাহলে আফ্রিদি এই সাহসটাই করত না। কিন্তু আফ্রিদি সাহস করতে যাইছে যে যেহেতু আফ্রিদির না এর জন্য আফ্রিদি এটা সাহস করতে গেছে। এটা হলো আফ্রিদির ভয়েস না এটা তো কনফার্ম।”
এছাড়াও উপস্থাপিত কল রেকর্ডের সাথে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের সম্পৃক্ততা প্রমাণে ফোন দেওয়ার কোন কল স্টোরি বা কল লোগ নেই। এবংকি এই সংক্রান্ত বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ কোন ভুক্তভোগীর তরফ থেকেও নেই। অভিযোগ পত্রে সন্দেহ প্রকাশ করে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অসংগতি ও জামায়াতের দলীয় প্রভাব সহ তার প্রকাশিত অন্যান্য চাঞ্চল্যকর সংবাদের জেরে প্রতিহিংসা পরায়ণ একটি গুপ্ত কুচক্রী স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর থেকে বড় অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে মাহফুজ শুভ্র তার সম্মানহানির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সর্বশেষ, তিনি তার শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকা: ১৯ শিক্ষকসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ফ্যাসিস্ট আমলে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যে একটি চেক কে কেন্দ্র করে তা আত্মসাৎ এর ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগ করা হয় এবং প্রমাণহীনতার কারণে উক্ত অভিযোগের কোন সুরাহা হয়নি। এবং কি উক্ত অভিযোগ পরবর্তীতে চেক প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে অভিযোগকারী নিজেই উঠিয়ে নিয়েছিল। এবং ঐ পূর্বোক্ত অভিযোগকারী একজনের কাছ থেকে টাকা পান কিন্তু পাওনাদার টাকা দিচ্ছেনা। সে বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য তিনি অনেক সাংবাদিকের কাছে যান এবং এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেই সহযোগিতা চাইলে তার সঙ্গে গত বছর ডিসেম্বরে প্রথম ভুক্তভোগী সাংবাদিকের সাথে তথ্য প্রমান কেন্দ্রিক কথাবাত্রা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী হওয়ায় সে সময় উক্ত সংবাদদাতার পরীক্ষা থাকায় এবং পাওয়া তথ্য আরও যাচাই করার পরে উভয় পক্ষের নিয়োগ বাণিজ্যে ও আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা জানতে পেরে এই বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক আর এগোইনি এবং পরবর্তীতে এই বিষয়ে কি হয়েছে বা হয়নি তাতে তার সংশ্লিষ্টতাও নেই, একই সাথে এরপরে কি হয়েছে তাও তিনি জানেন না। তবে তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে, পরবর্তীতে উক্ত নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা লেনদেনের ঘটনার মীমাংসায় বিশ্ববিদ্যালয়টির জামায়াতের কিছু সদস্যরা জড়িয়ে পড়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি দৈনিক দিনকাল ও ইত্তেফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগে অসঙ্গতি ও জামায়াতের দলীয় প্রভাবের সংবাদ প্রকাশ করার পর উক্ত সংবাদদাতা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে এরই প্রতিশোধস্পৃহা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি কুচক্রী স্বার্থান্বেষী গুপ্ত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী এবং চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক চবির অর্থনীতি বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মাহফুজ শুভ্র একটি বানোয়াট অস্পষ্ট কল রেকর্ড ব্যবহার করে পূর্বক্ত মিথ্যা অভিযোগ অপসারণে অর্থের বিনিময়ে মধ্যস্থতা করার মিথ্যা দায়ে হেনস্তা এবং মানহানি করার জন্য ভুক্তভোগী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ৭১ টিভির চবি প্রতিনিধি ও চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ শুভ্র গণমাধ্যমকে জানান, প্রথমত প্রক্টর অফিসে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি অজ্ঞাত না। দ্বিতীয়ত যে অভিযোগগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো যদি দেওয়া হয় তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফকে গণমাধ্যম থেকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।