রাত পেরিয়ে সকালেও জাকসু নির্বাচনের ফল সম্ভব হয়নি, বাড়ছে অপেক্ষা ক্ষোভ

Any Akter
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:১৩ অপরাহ্ন, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:৩১ পূর্বাহ্ন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল রাত পেরিয়ে সকালেও ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। হল সংসদের ভোট হাতে গণনা শেষ করার পর চলছে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা। ফল ঘোষণার অপেক্ষা বাড়ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা।

এর আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। সিদ্ধান্ত হয়, জনবল বাড়িয়ে রাতের মধ্যেই ফলাফল ঘোষণার। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হলেও গণনা শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন: চাকসুতে পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জাবেদ

এদিকে, অনিয়মের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাবি শাখার সভাপতি। তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি, বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। অনেক অভিযোগ উঠেছে। আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া হয়েছে যাতে আমি পদত্যাগ না করি। গতকাল থেকেই আমার ওপর চাপ ছিল, তবুও আমি পদত্যাগ করছি। এখন পদত্যাগ না করলে পরে যদি অনিয়মের কথা বলি, তখন প্রশ্ন উঠবে কেন পদত্যাগ করিনি।

তবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের এজিএস প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, জাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

আরও পড়ুন: জুলাই পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির মডেল ছাত্রশিবির : সাদিক কায়েম

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয় রাত ১০টায়। আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) প্রযুক্তি বাতিল করে ম্যানুয়াল গণনায় ফিরে যাওয়ার কারণে সময় বেশি লাগছে।

এদিকে হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হলেও কেন্দ্রীয় ফলাফল নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এতে প্রার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,ভোট গণনার  প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে এগুচ্ছে  ‘এই গতিতে চললে আগামী তিন দিনেও ফলাফল ঘোষণা করা যাবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. জাকির আহমেদ জানান, ‘সিনেট ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

এবারের জাকসু নির্বাচনে ১১ হাজার ৭৫৯ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১৭৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন এবং যুগ্ম সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৬।

এবারের নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ১১ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

ছাত্রদের হলভিত্তিক ভোটার সংখ্যা হলো—আল বেরুনী হলে ২১০ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৮ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, জাতীয় কবি নজরুল হলে ৯৯২ জন এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন।

ছাত্রীদের হলভিত্তিক ভোটার সংখ্যা হলো—নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৭৯৮ জন এবং তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন।