জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা

Sanchoy Biswas
আরাফাত চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ন, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:১৪ অপরাহ্ন, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও লড়াই-সংগ্রামের পর আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু)' নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জবি ছাত্রশিবির সমর্থিত 'অদম্য জবিয়ান ঐক্য' প্যানেল।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন 'অদম্য জবিয়ান ঐক্যের' ভিপি পদপ্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম এবং এজিএস পদপ্রার্থী মাসুদ রানা।

আরও পড়ুন: শিবির কর্মী-চাকসু নেতা বোরহানের শহীদ হাদীকে জড়িয়ে ছাত্রদল নিয়ে মিথ্যাচার

সংবাদ সম্মেলনে অদম্য জবিয়ান ঐক্যের ভিপি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, আবাসন সংকট, পরিবহন স্বল্পতাসহ নানা সংকটে জর্জরিত। একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে শিক্ষার্থী সংসদই পারে প্রশাসনের সাথে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে। তাই শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন আমাদের কাছে শুধু জয়-পরাজয়ের লড়াই নয়; বরং দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় এবং একটি আধুনিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত 'অদম্য জবিয়ান ঐক্য' প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা করছি।'

'অদম্য জবিয়ান ঐক্য' প্যানেলের ইশতেহারগুলো হলো, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে এবং দ্বিতীয় ধাপের কাজ দ্রুত সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে তার ধারাবাহিকতা নিশ্চিতে কাজ করা। কেরানীগঞ্জের সাত একর জমিতে আবাসন নির্মাণ এবং পুরান ঢাকায় নির্মাণাধীন দুটি হলের কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকম্প-সহনশীল কাঠামো, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি ও দ্রুত বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় পর্ব বা ম্যানার শেখানোর নামে র‍্যাগিং, সাইবার বুলিং এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে 'জিরো টলারেন্স নীতি' গ্রহণ। ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করতে 'ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন' ক্যাম্পাস গড়তে উদ্যোগ গ্রহণ করা।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে জাবি’কে শ্রেষ্ঠত্ব কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন: ভাইস-চ্যান্সেলর

আন্তর্জাতিক মানের আউটপুট-বেজড এডুকেশন (OBE) কারিকুলাম সব বিভাগে বাস্তবায়ন করে শিক্ষার মানোন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র উপযোগী করে গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের আধুনিকায়ন এবং ক্যাম্পাসে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা বৃদ্ধির জন্য 'স্টারলিংক' স্থাপনে কাজ করা। শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে বিশেষ স্কলারশিপ ব্যবস্থা, বরাদ্দ বাড়িয়ে ল্যাবগুলোকে সমৃদ্ধকরণ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ ফেস্ট, সেমিনার, রিসার্চ-বেজড কর্মশালা ও কনফারেন্সের আয়োজন করা।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত অ্যাকাডেমিক বই, বিদেশি জার্নাল, ডেটাবেজ ও ডিজিটাল রিসোর্স বৃদ্ধিতে কাজ করা।

শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ন, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে 'প্রোটেক্ট জবিয়ানস' অ্যাপ চালু করা, পর্দানশিন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু এবং মাতৃত্বকালীন সময়ে ক্লাস উপস্থিতির নিয়ম শিথিল করণে কাজ করা।

ছাত্রী হলের ফার্মেসি সেবা চালু, লন্ড্রি স্থাপন, হলের আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতে ক্যাফেটেরিয়া ও হলের ক্যান্টিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা। টিএসসির জমির মালিকানায়-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং টিএসসির আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তুলতে কাজ করা। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত যাতায়াত সহজ করতে শিফটভিত্তিক বাস সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন ও আধুনিক বাস সংযোজন। খেলাধুলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত, মাঠের অবকাঠামো আধুনিকায়ন, জিমনেসিয়াম চালু, ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর গণ-আন্দোলন এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনাকে শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরা।

শিক্ষার্থীদের আইনি সচেতনতা ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে 'লিগ্যাল হেল্প ডেস্ক' চালু করা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় ভূমিকা রাখা।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অদম্য মেধাবী বৃত্তি এবং ক্যাম্পাস-সংলগ্ন নিরাপদ স্থানে আবাসন নিশ্চিতে কাজ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষত আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, 'ফ্রি টিউশন মিডিয়া অ্যাপ' চালু করা। সমাবর্তন, নবীনবরণ ও শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনকে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোকে গতিশীল করতে বাজেট বৃদ্ধি এবং রুম বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

সংবাদ সম্মেলনে এজিএস পদপ্রার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমরা অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেল আপনাদের সামনে কেবল কিছু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে আসিনি; এসেছি একটি বাস্তবসম্মত ইশতেহার নিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের মহামূল্যবান ভোট কেবল একজন প্রতিনিধি নির্বাচন নয়; বরং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামীর ভাগ্য নির্ধারণের চাবিকাঠি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা দূর করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও মূল্যবান ভোট প্রত্যাশা করছি। আসুন, ভয়ের সংস্কৃতিকে বিদায় জানিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে একটি নতুন ভোরের সূচনা করি।