ইরানে রাজনৈতিক কোন্দল ও নিষেধাজ্ঞার চাপে অস্থিরতা, যুদ্ধের আশঙ্কা

কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে ইরান এখন গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির অভ্যন্তরে শাসকগোষ্ঠীর ভেতর প্রভাব বিস্তারের লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে, আর সাধারণ মানুষ ক্রমেই অর্থনৈতিক চাপে পড়ছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আরও পড়ুন: পশ্চিম তীর দখলের পদক্ষেপ ‘শান্তিচুক্তি হুমকির মুখে’: মার্কো রুবিও
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে ইউরোপীয় দেশগুলো—ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য—২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ ধারার মাধ্যমে। আলোচনার পরও ইরান নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর প্রস্তাব মেনে নেওয়া মানে “আত্মসমর্পণ” করা।
ইরানে এখন মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় মুদ্রার মানও ইতিহাসের অন্যতম নিম্নস্তরে নেমে এসেছে। চাকরি, বেতন ও পণ্যের দামের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের সরকার অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেলেও অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ঠেকাতে নতুন নীতি প্রণয়নে ব্যস্ত।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি সংসদে পশ্চিম তীর দখলে বিলের প্রাথমিক অনুমোদন
ইন্টারনেট ও জিপিএস সীমাবদ্ধতা এখনো বহাল রয়েছে। সরকারের দাবি, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে তা তুলে নেওয়া যাচ্ছে না। তবে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, স্বাধীন তথ্যপ্রবাহ রুদ্ধ করে সরকার শুধু সময় কিনছে।
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছেন। তিনি বলেছেন, “তেহরান কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।”
ইরানের সামরিক নেতৃত্বও বলেছে, তারা আবারও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে হামলার সক্ষমতা রাখে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান মোহাম্মদ পাকপুর বলেন, পরবর্তী প্রতিক্রিয়া আগের যুদ্ধের চেয়েও শক্তিশালী হবে।
জাতীয়তাবাদী আবেগ জোরদারে ইরান প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের বীরদের ভাস্কর্য ও প্রচারণা জোরদার করছে। শাহিনশাহর শহরে সম্প্রতি উন্মোচন করা হয়েছে পারস্য বীর রোস্তমের একটি বিশাল ভাস্কর্য, যা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি, দেশটিতে বাধ্যতামূলক হিজাব ইস্যুতে রাজনৈতিক বিভক্তি তীব্র। রক্ষণশীলরা কঠোর প্রয়োগ চায়, আর সরকার বলছে, তারা হিজাব বাস্তবায়নে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে না। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু শহরে “নৈতিকতা পুলিশ” পুনরায় সক্রিয় হয়েছে।
এদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা আলি শামখানির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দ্বিচারিতার অভিযোগ নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। একটি ভিডিও ফাঁস হওয়ায় শামখানির পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপন সমালোচনার মুখে পড়েছে। রুহানিকেও পারমাণবিক চুক্তি ভাঙন এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রাজনৈতিক কোন্দল ইরানের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে।