গাজায় একসঙ্গে ৫৪ দম্পতির গণবিয়ে, নতুন জীবনের স্বপ্ন

Sadek Ali
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৫ অপরাহ্ন, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৫ অপরাহ্ন, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দীর্ঘ দুই বছরের যুদ্ধ, মৃত্যু আর অসহ্য ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেও গাজার মানুষ আশা হারাতে চাননি—তারই প্রমাণ হিসেবে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো ৫৪ দম্পতির গণবিয়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার এই আয়োজন যেন জীবনের প্রতি নতুন প্রত্যয় ফিরে পাওয়ার প্রতীক।

দক্ষিণ গাজার ধ্বংসস্তূপ ঘেরা পরিবেশেও ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি পোশাকে নববধূ ইমান হাসান লাওয়া এবং স্যুট পরা হিকমাত লাওয়া অন্য নবদম্পতিদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ২৭ বছর বয়সী হিকমাত বলেন, “সব প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা নতুন জীবনের পথে হাঁটছি। ইনশাআল্লাহ, এ যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হবে।”

আরও পড়ুন: 'ফিফা শান্তি পুরস্কার’ পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

গাজায় বিয়ে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। তবে চলমান ইসরাইলি হামলার মধ্যে বিয়ের আয়োজন প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির কারণে কিছুটা স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরলেও আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আর সম্ভব নয়।

খান ইউনিসে যখন নবদম্পতিদের অভিনন্দন জানাতে মানুষজন ফিলিস্তিনি পতাকা উড়াচ্ছিলেন, তখনও গাজার মানবিক সংকট পুরো আনন্দকে ঢেকে দিচ্ছিল। প্রায় ২০ লাখ মানুষের অধিকাংশই এখন বাস্তুচ্যুত। ইমান ও হিকমাতও যুদ্ধের শুরুতে দেইর আল-বালাহতে আশ্রয় নেন, যেখানে খাদ্য ও আশ্রয় পাওয়া ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: ডনবাস ইস্যুতে কোনো ছাড় নয়, কঠোর অবস্থানে পুতিন

নতুন জীবন কীভাবে শুরু হবে—তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় নবদম্পতি। হিকমাত বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি বাড়ি, চাকরি আর শান্ত জীবন। এখন শুধু একটা টিনের তাঁবু পেলেও আমরা খুশি হব।

তিনি আরও বলেন, জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা আমাদের প্রত্যাশার কাছাকাছি নয়।

ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা-সবুজ রঙের ফিলিস্তিনি পোশাকে ইমান বলেন, এ অনুষ্ঠান কিছুটা আনন্দ দিলেও তাঁর ভেতরে রয়ে গেছে গভীর ক্ষত। ইসরাইলি হামলায় তিনি বাবা-মাসহ বহু নিকটজনকে হারিয়েছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “এত শোকের পর আনন্দ অনুভব করা কঠিন। তবে আমরা আবার সবকিছু গড়ে তুলব, আল্লাহ চাইলে।”

সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মানবিক সংস্থা আল ফারেস আল শাহিম এই গণবিয়ের আয়োজন করে। শুধু অনুষ্ঠানই নয়, নবদম্পতিদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রীও দিয়েছে সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। নিহত-আহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।