খায়রুজ্জামানে আস্থা রাজশাহীবাসীর, সিলেট পেল নতুন মেয়র

বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটযুদ্ধ শেষ হয়েছে। নির্বাচনে রাজশাহীর আগের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের ওপরই আস্থা রেখেছেন নগরবাসী। আর সিলেটবাসী নতুন নগরপিতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে।
বেসরকারি ফল অনুযায়ী রাজশাহীর নতুন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে একযোগে ২৯ কর্মকর্তার বদলি
তবে বিএনপির না থাকা এবং সর্বশেষ খুলনা ও বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোট বর্জন করায় তেমন উত্তাপ ছিল না। শঙ্কা ছিল ভোটার উপস্থিতিও কম হবে। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে রাজশাহীতে ৫২ শতাংশ আর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৬ শতাংশ।
এ অবস্থায় দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট ঘিরে আ. লীগ-ছাত্রলীগকে সড়কে নামতে দেওয়া হবে না: ডিএমপি কমিশনার
খায়রুজ্জামানে আস্থা রাজশাহীবাসীর
রাজশাহী সিটিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। সিটি নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটের বেসরকারি ফলে রাজশাহী সিটির মেয়র হয়েছেন নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। এর মধ্যদিয়ে তৃতীয়বারের মতো এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সিটির দায়িত্ব লিটনের হাতে তুলে দিলেন রাজশাহীবাসী।
বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। পরে রাজশাহীর শিল্পকলা একাডেমিতে সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী নৌকা প্রতীকে লিটন পান ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুরশিদ আলম ১০ হাজার ৬৬৭ ভোট পান।
ভোটে জিতে টানা দুবার এবং সব মিলে তিনবার মেয়রের চেয়ারে বসছেন খায়রুজ্জামান লিটন। এরআগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয় পান লিটন। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী বুলবুল। লিটন নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট। আর বিএনপির মোসাদ্দেক হেসেন বুলবুল ধানের শীষ প্রতীকে পান ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। ভোট পড়েছিল ৭৮. ৮৬ শতাংশ।
এরআগে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী বুলবুলের ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোটের বিপরীতে খায়রুজ্জামান লিটন ৯৮ হাজার ৩৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তবে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্বদী না থাকায় শুরু থেকেই নির্বাচন ছিল অনেকটাই নিরুত্তাপ। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন চার জন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার (গোলাপ ফুল)। তবে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করেছেন।
খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী আন্দোলন ভোট বর্জন করায় অনেকটা নির্ভার ছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন।
তবে শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়ে। উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ৫২ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এবার ২৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১১ জন। একটি ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৪৬ জন প্রার্থী। এখানে ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ছয়জন। তৃতীয় লিঙ্গের একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীও রয়েছেন।
১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলে। ভোটকক্ষ ছিল ১১৫৩টি। ১৪৬৩টি ক্যামেরার মাধ্যমে রাসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ মনিটরিং করা হয়।
সিলেটবাসী পেলেন নতুন নগরপিতা
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এ নেতা দায়িত্ব পেয়ে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেবেন এমনটাই আশা সিলেটের বাসিন্দাদের।
বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ১৮ হাজার ৬১৪ ভোট পেয়ে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩২১।
বুধবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের নগরীর উপশহরের জালালাবাদ গ্যাস মিলনায়তনে ফল প্রকাশ করেন।
এদিকে আনোয়ারুজ্জামানের জয়ে প্রায় ১০ বছর পর সিলেটের নগরপিতা হলেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। দলটির সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ২০০৩ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সিলেটের নগরপিতা ছিলেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিকাল ৪টায় শেষ হয় নির্বাচন। পরে ভোট গণনা শেষে সন্ধ্যায় ফল প্রকাশ হয়।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। মাওলানা মাহমুদুল হাসান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হলেও দলটি ভোট বর্জন করেছে।
মেয়র পদে আরও লড়ছেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র মো. আবদুল হানিফ (কুটু), মো. ছালাহ উদ্দিন (রিমন), মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সিসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ এবং নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন।
মোট ৪২ ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র ছিল ১৯০টি। এর মধ্যে স্থায়ী মোট ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী ছিল ৯৫টি। ১৭৪৭টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সিসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ মনিটরিং করা হয়।