ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা পাচারে কানাডার শীর্ষ ধনী

টানবাজার থেকে ব্যাংকিং মাফিয়া ঝোলা শাহাবুদ্দিন

Sadek Ali
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মাত্র কয় বছর আগেও নারায়ণগঞ্জের টান বাজারে অবৈধ সুদিলগ্নী বন্ডের সুতার কারবারি ঝেলা শাহাবুদ্দিন সরাসরি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বনে গেছেন ব্যাংকিং মাফিয়া। ডাচ বাংলা ব্যাংকের মালিকানা দখল থেকে শুরু করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে প্রচার করে এখন কানাডার শীর্ষ ধনী। কারাবন্দি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার বান্ধবী তৌফিকা করিমের অবৈধ উপার্জিত হাজার হাজার কোটি টাকা কারসাজি করে এখন শাহাবুদ্দিনের পেটে জমেছে। ছাত্র গণ-আন্দোলনের সময় গভীর রাত পর্যন্ত আইন মন্ত্রীর বাসায় থেকে টাকা বিতরণ করতো এই শাহাবুদ্দিন। ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পালিয়ে যাওয়ার পর শাহাবুদ্দিন গা ঢাকা দেয়। জুলাই আগস্ট হত্যা কাণ্ডের একাধিক মামলায় আসামিও করা হয়। কিন্তু তাকে আটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে ম্যানেজ করে এখনো শাহাবুদ্দিন পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ডাচ বাংলা ব্যাংক। অজ্ঞাত স্থানে বসেই পরিচালনা করছেন ব্যাংকের কার্যক্রম।

সূত্রে জানা যায়, এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ, মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ আহমেদ এই তিনটি নাম একই ব্যক্তির যার জাতীয় পরিচয় পত্রও তিনটি (০৩)। তিনি নারায়নগঞ্জের টান বাজার হতে উঠে এসে মতিঝিল ব্যাংক পাড়ার মাফিয়া বনে গেছেন। মহাজনি সুদের ব্যবসায়ী, বন্ডেড সুতার অবৈধ ব্যাবসা, লোকাল সুতার এলসি টাকায় রূপান্তর করার অর্থনীতি ধ্বংসকারী ব্যাবসা করে বিপুল টাকা কামিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রবেশ করেন মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ। 

আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারিশদের নিয়ে নতুন নির্দেশনা

সাহাবুদ্দিনের হাতে আলাদিনের ছেরাগ পায় ২০০৯সালে শেখ হাসিনা সরাকার গঠনের পর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীর বিক্রম এর নাম ভাঙিয়ে সরকারি ব্যাংক গুলো থেকে হাতিয়ে নেন ৫,০০০ হাজার কোটি টাকারও অধিক। এই ব্যাপক লুটের কারিগর ছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগড়ার বাসিন্দা রয়্যাল টেক্সটাইলের মালিক আবুল কাশেম চৌধুরি (বর্তমানে দুবাই পলাতক) ও রকিবুল ইসলাম রাকিব যিনি নিজেকে টুটুল সাহেবের শ্যালক নামে পরিচয় দিতেন। টুটুল হলেন মাহাবুব আরা গিনি এর আপন ছোট ভাই।

ব্যাংকের মালিকানা বেদখল ও মামলাবাজি:

আরও পড়ুন: জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কাঠামো প্রস্তুত, শিগগির জমা

২০১২ এর ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকটির স্পনসর ডিরেক্টরদের মধ্যে আবদুস সালামের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তাকে ব্যাংকের পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ দিতে থাকেন কথিত এই সাহাবুদ্দিন গং।

বিষয়টি এমন ছিল যে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক মো: আবদুস সালাম। অপরদিকে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদের দাবি, ব্যাংকটির ২২ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইনে, কোনো পরিচালক বা তার পরিবার মিলে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। অতএব এ দুই উদ্যোক্তা অতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করছেন। দু’জন মিলে কোম্পানির প্রায় ৩৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। যদিও এ ব্যাপারে তখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাসেল-২ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪শ’ কোটি টাকায় উন্নীত করার বাধ্যবাধকতা জারি করলেও উদ্যোক্তা পরিচালকদের দ্বন্দ্বের কারণে গত দু’বছর ধরে এ ব্যাংকটি বোনাস শেয়ারের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। বর্তমানে এ ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্থা সূত্রে জানা গেছে, মো: আবদুস সালামের কাছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ লাখ ৭০ হাজার কাগুজে শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকের অসহযোগিতার জন্য তিনি ওই শেয়ার ডিমেট করতে পারেননি। এসব কাগুজে শেয়ার ডিমেট করতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি তিনি। এসব ব্যাপারে আবদুস সালাম দোষারোপ করছেন সাহাবুদ্দিনকে। আবদুস সালাম অভিযোগ করেছিলেন যে, “আমার কাছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এই শেয়ারের মালিকানা দাবি করেছেন সাহাবুদ্দিন। তিনি শুধু মৌখিকভাবে এই দাবি করেছেন। এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালীন বিনিয়োগের সব কাগজপত্র তার কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেছেন আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘সাহাবুদ্দিনের খামখেয়ালিপনার জন্য এ ব্যাংকের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাজার ধসের ফলে বিনিয়োগকারীদের অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। তার ওপর ব্যাংকটি যদি লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে এরকম অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে তাহলে আর কি বলার আছে। ২০০১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ডাচ-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট ২ কোটি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং বাকি ১৩ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

২০০৮ সালে ব্যাংকটি এর বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালেও ৩৩.৩৩ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়। তবে এর পরই শুরু হয় জটিলতা। দুই উদ্যোক্তা পরিচালকের দ্বন্দ্বে ২০১০ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংক শুধু পাবলিক শেয়ারহোল্ডার ও বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে স্থানীয় উদ্যোক্তারা কোনো লভ্যাংশ নেবে না বলে জানায় ।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের লভ্যাংশের অংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে (সিএসআর) ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকটি। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে নিম্ন আদালতে একটি মামলা করেন আবদুস সালাম। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ছয়জন স্থানীয় উদ্যোক্তা ছাড়াও ডাচ এন্ট্রাপ্রেনিউরিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উদ্যোগে ১৯৯৫ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ডাচ এন্ট্রাপ্রেনিউরিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তার অংশ অপর বিদেশি কোম্পানি ইকোট্রিন হংকং লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে। পরোক্ষভাবে ইকোট্রিন হংকং লিমিটেডের মালিক ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি ডাচ-বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশনেরও চেয়ারম্যান। সাহাবুদ্দিন আহমেদ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ও অধিকাংশ শেয়ারের মালিক হওয়ায় পরোক্ষভাবে পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণ করেন। এ কারণে ব্যাংকটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সাহাবুদ্দিন আহমেদের ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক ২০১০ সালের জন্য ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তাদের লভ্যাংশ দিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ৩০ হাজার প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীর জন্য ১০২ কোটি টাকার স্কলারশিপ ফান্ডের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ ফান্ডের নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও ব্যবস্থাপনায় কে থাকবে, সে সম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। এর আগে কোটি টাকার বৃত্তি প্রদানের একটি উদ্যোগ নিয়েও বিতর্কিত হয়েছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। জানা যায়, এ ব্যাংকটিতে ডাচদের বিনিয়োগ থেকে তারা কোনো লভ্যাংশ নিচ্ছে না। ব্যাংকের সিএসআর থেকে প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণদের নামমাত্র বৃত্তির নামে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অভিযোগ আছে যে, এই ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ঘোষণাকৃত ১০২ কোটি টাকা স্বচ্ছ ভাবে বিতরণ হয় নাই। ঐ টাকা দিয়ে সাহাবুদ্দিন গং আত্মসাৎ করে ডাচ এন্ট্রাপ্রেনিউরিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের শেয়ার গুলো ইকোট্রিন হংকং লিমিটেডের নামে কিনে নেন। এইখানে কর ফাকির একটি বিশাল দুর্নীতি হয়েছে। লোক দেখা মিডিয়া কভারেজের জন্য কথিত সেই বৃত্তি অনুষ্ঠানে একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হতো। এই শিক্ষা বৃত্তির টাকা থেকে ব্যাপক লুটপাট চালান এই ঝোলা সাহাবুদ্দিন।

মামলার এজাহারে আবদুস সালাম উল্লেখ করেন, পরিচালনা পর্ষদের এ সিদ্ধান্তে তিনি লভ্যাংশ বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ২০১০ সালের লভ্যাংশ বাবদ ওই ১০ কোটি টাকার সঙ্গে আরও ২০ শতাংশ সুদসহ অর্থ দাবি করে নিম্ন আদালতে মামলা করেন আবদুস সালাম। তবে এসব ব্যাপারে উদ্যোক্তা পরিচালক সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে কখনই কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি৷

করফাঁকি ও বিদেশে অর্থ পাচাওে কানাডার শীর্ষ ধনী সাহাবুদ্দিন

নামে বিনামে অর্জিত সম্পদের আয়-মুনাফা গুলো লুকিয়ে রাখার জন্য  কাদের সিনথেটিক মিল, এ এ সিনথেটিক ইয়ার্ন মিল, এমএস স্পিনিং, এমএসএ স্পিনিং, এএ নীট স্পিন লি. প্রতিষ্ঠান গুলোতে বন্ডের ঘোষণা বহির্ভূত কাঁচামাল স্টোর করে রাখেন, যা অডিট করলেও ধরা পরার সম্ভাবনা থাকে না। সাহাবুদ্দিন একাধারে বাংলাদেশ, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, সাইপ্রাস,ও আমেরিকার পাসপোর্টধারী। নিজ নামে, স্ত্রী আছমা আহমেদ, মেয়ে সাদিয়া রাইয়ান আহমেদ, বড় ছেলে সামেয় আহমেদ, ছোট ছেলে লোকমান আহমেদ এবং আজ্ঞাবহ এমডি আবুল হাসেম শিরিন এর নামে উল্লিখিত দেশ সমূহে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করে বিশাল সম্পদ গড়েছেন। কথিত আছে সাহাবুদ্দিন নাকি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের অন্যতম ধনীদের তালিকায় প্রাদান্য পেয়েছেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর সাথে অবৈধ আর্থিক সম্পর্কঃ কারাবান্দি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর সাথে অবৈধ আর্থিক সম্পর্কের সূত্রে তিনি বাংলাদেশের সকল এয়ারপোর্ট, মেট্রোরেল স্টেশন গুলোতে এটিএম বুথ স্থাপন করার অনুমতি পেয়ে যান। এছাড়াও প্রতিটি ব্রীজের অটোমেটেড টোল আদায় সিসটেম স্থাপন করার ব্যবসায় তিনি একাই বাগিয়ে নেন।

২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কারাবন্দি সাবেক আইনমন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর মা জাহানারা হকের নামে সিডিউল ব্যাংক হিসেবে সিটিজেন ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। আইনমন্ত্রীর মা জাহানারা হক ১৮ এপ্রিল মারা যান, মৃত্যুর কারণে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডিং বা মালিকানায় পরিবর্তনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। এতে সম্মতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৮ অক্টোবর ২০২৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪০৯তম সভায়  এ বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয় কিন্তু সদ্য সাবেক আইনমন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক চেয়ারম্যান না হয়ে চেয়ারম্যান বানান অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম কে। এই মহিলা একাধারে একজন আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং পরিশেষে ব্যাংকার বনে গেলেন। আইন অঙ্গনে পরিচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে। তাদের ঘিরে নানা মুখরোচক গল্প হতো আড়ালে। কালবেলার প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

স্ত্রী-সন্তানবিহীন সাবেক এই মন্ত্রীর আস্থাভাজন ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত তৌফিকা করিম। তাকে করা হয় আনিসুল হকের মালিকানাধীন সিটিজেন চার্টার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও একটি বেসরকারি টিভির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান৷ বিভিন্ন সময়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যসহ বসানো হয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে। আইনজীবীদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা করদাতা হয়েছেন এই নারী। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। সাবেক এই মন্ত্রী ও তার বান্ধবী ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশ-বিদেশে গড়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আনিসুল হক। আর তৌফিকা করিম চলে গেছেন আত্মগোপনে। তবে এই নারী দেশ ছেড়ে কানাডায় তার ছেলের কাছে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সেখানেই রয়েছে তার বিপুল সম্পদ। পালাবদলের পর সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনিসুল হকের বাবা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের চেম্বারে জুনিয়র হিসেবে কাজ করতেন তৌফিকা করিম। সিরাজুল হক মারা যাওয়ার পর তৌফিকা হয়ে যান আনিসুল হকের জুনিয়র। ২০১৪ সালে আইনমন্ত্রী হন আনিসুল হক। এরপর দীর্ঘ প্রায় এক দশক তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।