স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসিতে নিরাপত্তা আবেদনের হিড়িক

তিন সম্পাদক-এনসিপির ৬ নেতাসহ ২০ জনকে গানম্যান প্রদান

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:১৬ অপরাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী হামলা ও হুমকির কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকলের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদকসহ ঝুঁকিপূর্ণ ২০ জনকে গানম্যান প্রদান করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা সভায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের দেহরক্ষী হিসাবে গানম্যান প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমন্বয়ক, সংসদ-সদস্য প্রার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

আরও পড়ুন: দেশে ফিরলে তারেক রহমানকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছয় নেতাসহ মোট ২০ জনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গানম্যানপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন—অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

আরও পড়ুন: যাত্রা শুরু করলো ভোটের গাড়ি ‘সুপার ক্যারাভান’

এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনকেও গানম্যান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান-এর জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যান ও বাসভবনের নিরাপত্তায় সশস্ত্র পুলিশ সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এ ছাড়া নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমদ, গণসংহতি আন্দোলন-এর প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখসহ আরও কয়েকজনের জন্য।

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। পরিবারের এক বোনকে অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। অন্য সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত শতাধিক জন রাজনীতিক নিরাপত্তা, গানম্যান কিংবা অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি প্রায় ২৫ জন সরকারি কর্মকর্তাও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, “যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের একজন অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় জনবল সীমিত থাকায় সবাইকে গানম্যান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব জটিলতার কারণে বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায় নিরাপত্তা চেয়ে রাজনীতিবিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেকেই আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা  রাত পর্যন্ত কাজ করছেন। রাজনৈতিক শাখায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করছেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে গান লাইসেন্স চেয়ে আবেদনও বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের সরাসরি হাজির হয়ে অনেক আত্মীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আবেদন করেছেন । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় এই আবেদন গুলির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে ২০ জনকে বডিগার্ড দেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গানম্যান নিতে অস্বীকার করেছেন। গণধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু বডিগার্ড ফিরিয়ে দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি বিবেচনায় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তালিকা নিয়ে তারা একটি বৈঠক করে দেহরক্ষী প্রদান করবে। এছাড়াও টহল পুলিশ বা অন্য কোনোভাবে সবার সমাবেশে রাজনৈতিক প্রটোকলকে নিরাপত্তায় আনার বিবেচনা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান বাংলাবাজার পত্রিকা কে বলেন আমাদের কাছে অনেকে আবেদন করেছেন। আবেদনগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। এখনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। গান লাইসেন্স এর জন্য অনেকে আবেদন করেছে এগুলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।