কাতার আমিরের বিকল্প এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে শনিবার
শারীরিক সক্ষমতায় বিলম্ব খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা
কাতারের আমির প্রদত্ত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছালেও এখন শারীরিক সক্ষমতার উপরে নির্ভর করছে বিদেশ যাত্রা। দেশি–বিদেশি চিকিৎসকরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দীর্ঘ সময় জার্নির শারীরিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে কাজ করছে। এদিকে কাতার আমিরের নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কারিগরি ত্রুটির কারণে নির্ধারিত সময়ে পাঠাতে না পারায় জার্মানির তৈরি বিকল্প একই রকম আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার ঢাকায় আসছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিদেশ পাঠানোর সময় নির্ধারিত হবে বলে জানা গেছে। দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের শারীরিক সক্ষমতা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিদেশ যাত্রা বিলম্ব হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এছাড়াও শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরও পড়ুন: এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের বিয়ে, কনে ছাত্রনেত্রী শ্যামলী সুলতানা জেদনী
তিনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ভালো না। এয়ারক্রাফটের সমস্যা আছে, একই সঙ্গে শারীরিক অবস্থাও ভালো না। এই অবস্থায় যাত্রার তারিখ বদল করা হয়েছে। এখন মেডিকেল বোর্ড বললে, ফ্লাই করার মতো থাকলে রোববার তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে।’
এর আগে বিএনপির মিডিয়া সেল জানায়, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারছে না। খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার সময় তাই পিছিয়ে যাচ্ছে। কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি শুক্রবার আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৭ ডিসেম্বর, রোববার লন্ডন যাত্রা হতে পারে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে খালেদা জিয়াকে: মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এটি শনিবার পৌঁছাতে পারে। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা যদি যাত্রার জন্য উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে, ইনশা আল্লাহ ৭ তারিখ তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।’
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ইতিমধ্যে লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। এদিকে তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন জানান, জুবাইদা রহমান এভারকেয়ার থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে ফিরবেন। তিনি সার্বক্ষণিক মেডিকেল বোর্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চিকিৎসায় অংশ নিচ্ছেন।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল—ডা. জাহিদ হোসেন, ডা. এনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. মো. জাফর ইকবাল ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। তাদের সঙ্গে থাকবেন পরিবারের ও দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও—খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, তারেক রহমানের সহকারী মো. আব্দুল হাই মল্লিক, খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার। পাশাপাশি এসএসএফের দুই সদস্যও এ যাত্রায় অংশ নেবেন।
দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনি–জনিত জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন ৮০ বছর বয়সী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় করোনারি কেয়ার ইউনিটে। সেদিন থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা তদারক করছে। গত কয়েক দিনে চীন ও যুক্তরাজ্য থেকেও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশেই খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।





