মহররম: আশুরা সহ নানা ফজিলতে আরবি নববর্ষ

আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪৪৭ হিজরী সন আজ শুক্রবার থেকে শুরু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ উঠায় আজ ১ মহররম। নতুন চাঁদের সাথে আরবি মাস ও বর্ষ শুরু হয়। আরবি মাসের গণনা আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরত থেকে শুরু হলেও প্রাচীন আরব থেকেই আরবি ক্যালেন্ডারের প্রচলন ছিল। মহররম মাসের ১০ তারিখ সকল ধর্মের মানুষের কাছেই সম্মানিতভাবে পালিত হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর ইহুদি ও নাসারাদের মধ্যে পবিত্র আশুরা অর্থাৎ মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পালন করতে দেখা যায়। এই মহররম মাসে আশুরা নিয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও আমলের কথা বলা হয়েছে। মুসলমানদের জন্য অনেক ফজিলতপূর্ণ এই মাস।
মহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস। এ মাসে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রতিটি মুসলমানের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে বছরজুড়ে রহমত বরকত ও কল্যাণ দ্বারা ঢেকে দেন। এ মাসে রোজা রাখা বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুমহান আদর্শ। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী মহররমের ফজিলত তুলে ধরা হলো। আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হযরত রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা তো তাদের অপেক্ষা হজরত মূসা আলাইহিস সালাম এর অনুসরণের অধিক যোগ্য। এরপর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এদিনে রোজা রাখলেন এবং অন্যদের ও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।(বোখারি শরিফ,১ম-খ-পৃ.২৫৮)
আরও পড়ুন: নুসুক অ্যাপ এখন থেকে ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে
৩ টি রোজা: ইহুদি ও খ্রিস্টানরা এ দিবসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে রোজা রাখে। তাই অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররমের ১০ তারিখের রোজার সঙ্গে ৯ অথবা ১১ তারিখকে মিলিয়ে রোজা রাখতে বলেছেন। একদিন রোজা রাখা মাকরুহ।(ফাতাওয়ায়ে শামী,৩য়-খ-পৃ.৩৩৫)
আশুরার ফজিলত: ইমাম বায়হাকী রহ. তাঁর শোআবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি খালেছ মনে উদার হস্তে আশুরার দিন দান-খয়রাত করবে, আল্লাহ পাক সারা বছর তার রুজি-রোজগারে বরকত দান করেন।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু
হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার দিন এবং রমজান মাসে যেভাবে তার সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য কোনো সময় দেখিনি’। (বুখারি,মুসলিম)
হযরত আবু কাতাদাহ আল-আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, এ রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়। (ইবনে মাজাহ,মুসলিম শরিফ)
নবী করিম সা. ইরশাদ করেন,‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রোজা রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন।(জামে তিরমিজি ১/১৫৭)
উপরোল্লিখিত ঘটনা ও হাদিসগুলো পড়লেই বোঝা যায় এ মাস কত গুরুত্বপূর্ণ। আশুরার দিন কত ফজিলত ও বরকতময়। একই সঙ্গে এ মাসের তিনটি রোজার (৯.১০.১১ তারিখে) মধ্যে আল্লাহ কত ফজিলত রেখেছেন।
আল্লাহ সবাইকে বিষয়গুলোর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমীন।
মহররম হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। নানা কারণে মাসটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। এমাসের ১০ তারিখ হলো পবিত্র আশুরা। এ দিনের সঙ্গে আছে পৃথিবী সূচনালঘ্নের বহু ইতিহাস ও ঘটনাবলি। যে কারণে মহররমকে আরবি মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস ধরা হয়। আসুন জেনে নেই এ মাসে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটনা ঘটেছে।
১) এ মাসে আশুরার দিন তথা ১০ তারিখে হযরত আদম আ. এর তওবা কবুল হয়েছে। বর্ণিত আছে, তিনি দীর্ঘ ৩০০ বছর কান্নার পর আশুরার দিকে তার তওবা কবুল হয়।
২) হযরত নূহ আ. এর জাহাজ মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পায়। প্লাবন শেষে জাহাজটি জুদি পাহাড়ে (বর্তমানে আরারাত পর্বতশ্রেণী) এসে স্থির হয়।
৩) এ দিনে হযরত মূসা আ. ও বনি ইসরাইল ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত হন এবং ফেরাউন ও তার অনুচরবর্গ লোহিত সাগরে নিমজ্জিত হয়।
৪) এ দিনে হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পান।
৫) এ দিনে হযরত ঈসা আ. জন্মগ্রহণ করেন এবং এ দিনেই তাকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
৬) আশুরার দিন পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.ও রোজা রাখতেন।
৭) রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা নফল রোজায় পরিণত হয়।
৮) আরশ, কুরসী, আসমান-জমিন, চন্দ্রসূর্য, তারকা, বেহেশত এ দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
৯) এ দিনেই সর্বপ্রথম আসমান থেকে যমিনে বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
১০) হযরত ঈসা আ. এ দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন। এ দিনেই তাকে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছিল।
১১) হযরত ইবরাহিম আ. এ দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে তিনি এ দিনেই মুক্তিলাভ করেছিলেন।
১২) এই দিনেই হযরত সোলাইমান আলাইহিস সালাম-কে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বাদশাহী দেয়া হয়েছিল।
১৩) এই দিনেই হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাঁর চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিলেন।
১৪) এ দিনেই হযরত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, বেহেশতি যুবকদের সরদার হযরত ইমাম হোসেইন রা. শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেন।
ইয়া আল্লাহ; মহররম মাসের ফজিলতের উসিলায় আমাদের সকলের গুনাহ গুলো মাফ করুন; আল্লাহুম্মা আমিন।