২৪০ যানবাহনের অস্বাভাবিক রেজিস্ট্রেশন, ধামাচাপা তদন্তের অভিযোগ

Abid Rayhan Jaki
মো: আমান উল্লাহ আকন্দ, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ন, ১১ জুন ২০২৪ | আপডেট: ৫:৪৭ অপরাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ময়মনসিংহের সাবেক সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো: শহীদুল আযমের বিরুদ্ধে নেত্রকোনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে ২৪০টি ভারি যানবাহনের অস্বাভাবিক রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রনালয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে দায়সারা তদন্তে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলেও গুঞ্জণ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।      
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকগন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নেত্রকোনা কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। ফলে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক শহীদুল আযম। তাঁর সময়ে সংশ্লিষ্ট দালালদের তৈরি করা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৪০টি বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহনকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। যা রহস্যজনক এবং অস্বাভাবিক। এমন দাবি সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের।    
অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজনীয় ইনভয়েজ, বিল অব এন্ট্রি, বিল অব লেডিং, কমার্সিয়াল ইনভয়েজ, এলসিএ, প্যাকিং লিস্ট, আমদানিকারকের টিটিও সেল রিসিটসহ ইত্যাদি কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করে এসব যানের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এ ঘটনায় ২০২২ সমালের নভেম্বর মাসে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঘটনাটি দায়সারা তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট উপসচিব ও তদন্ত কর্মকর্তা মো: হেমায়েত উদ্দিন ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তড়িগড়ি করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করেন তদন্ত কর্মকর্তা।        
এই বিষয়ে মো: হেমায়েত উদ্দিন বলেন, এটি অনেক আগের তদন্ত। সরেজমিন তদন্তে আমি যা পেয়েছি, তা প্রতিবেদনে এসেছে। এতে জাল-জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।    
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার প্রশ্ন- হঠাৎ করেই কেন শহীদুল আযমের সময় চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৪০টি বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহনকে অস্বাভাবিকভাবে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হল এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। মূলত তদন্ত প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক এই ঘটনাটিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে অনৈতিকভাবে।  
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র আরও জানান, বিআরটিএ ডিজিটালাইজড হওয়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২০ বছরে নেত্রকোনা কার্যালয় থেকে ভারী যানবাহন ট্রাক নেত্রকোনা-ট-১১ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১০টি। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দুই বছরে একই সিরিয়ালের যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৪৯টি। এছাড়া মিনি ট্রাক নেত্রকোনা-ড-১১ সিরিয়ালের ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২০ বছরে ৫টি রেজিস্ট্রেশন হলেও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৭৮টি যানের। এছাড়াও ২০ বছরে পিকআপ নেত্রকোনা-ন-১১ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৬টি। কিন্তু শহীদুল আযমের দুই বছরের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে ৮৪টি। মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য স্পেশাল পারপাসের নেত্রকোনা-শ-১১ সিরিয়ালের যানবাহন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০ বছরে তিনটি রেজিস্ট্রেশন হলেও শহীদুল আযমের দুই বছরে হয়েছে ৯টি। ট্যাংক লরি নেত্রকোনা-ঢ-৪১ সিরিয়ালের যানবাহন ২০ বছরে ৪টি রেজিস্ট্রেশন হলেও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত হয়েছে ২১টি। এই হিসাবে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২০ বছরে ২৮টি ভারী যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন হলেও শহীদুল আযমের মাত্র দুই বছরে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে ২৪০টি যান। আর এই সবগুলি গাড়ীর মালিক চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্থায়ী বাসিন্দা। অথচ রহস্যজনক কারণে তাদের গাড়ীগুলোর রেজিস্ট্রেশন হয়েছে নেত্রকোনায়। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে গাড়ীর মালিকদের নেত্রকোনা এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা দেখানো হয়েছে। যা কাল্পনিক এবং মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয়রা।    
এছাড়াও শহীদুল আযম ময়মনসিংহে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিআরটিএ ময়মনসিংহ অফিসের সরকারি বরাদ্দকৃত বাজেটের টাকা গোপনীয়ভাবে উত্তোলন করে আত্মস্বাত করেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এই ঘটনাটিও দায়সারা তদন্তের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়া হয়  বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।  
তারা জানায়, শহীদুল আযম বিআরটিএ’তে অনেক প্রভাবশালী মানুষ। উপর মহলে তার হাত অনেক শক্তিশালী। এ কারণে একাধিকবার অপরাধ করেও তিনি পার পেয়েছেন।
তবে অভিযোগ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও নেত্রকোনার সাবেক সহকারী পরিচালক শহীদুল আযমের বক্তব্য জানা যায়নি।
এই বিষয়ে বিআরটিএ’র নেত্রকোনা কার্যালয়ের বর্তমান সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) বলেন, ২৪০টি যানের রেজিস্ট্রেশনের ঘটনাটি অনেক আগের। এই বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। শুনেছি পূর্বের নথিপত্র অফিসে সংরক্ষিত আছে। এর বেশি আমার কিছু জানা নেই।