সংযোগ সড়কে ধস

সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সেতুতে শুকানো হয় খড়

Any Akter
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৪০ অপরাহ্ন, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১২:১৪ অপরাহ্ন, ০৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

 সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নে সুরিয়া নদীর ওপর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা সেতু জনসাধারণের কোন কাজে আসছে না। 

ধসে পড়া সংযোগ সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরির হওয়ায় সেতুর ওপর দিয়ে বড় যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সময় বাঁচাতে ধসে পড়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন: কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারেক রহমানের কাছে মহিলা দলনেত্রীর আবেদন

স্থানীয়রা জানান, সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মাথায় ভারী বর্ষণে সেতুর সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ধস দেখা দেয়। সংস্কার না হওয়ায় ইট খসে পড়ে দিন দিন সংযোগ সড়কটি সরু হয়ে যাচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে সংযোগ সড়কের ইট। বছর খানেক ধরে সেতুটি গ্রামবাসীর খড় ও ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালীপাড়া ও খলতবাড়ি গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সুরিয়া নদী। দুই পাড়ের দশটি গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য ছিলো না কোন সেতু। এতে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের নৌকা ও ভেলায় চড়ে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। ভোগান্তিতে পড়তে হতো কৃষি পণ্য সহ অন্যান্য মালপত্র স্থানান্তর করতে গিয়ে।

আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে পার্কিং করা যাত্রীবাহী বাসে রহস্যজনক আগুন

উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে সুরিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়।  ৫০ মিটার দৈঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয় পালুহাটি-মাওহা আঞ্চলিক সড়কে মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর ও খলতবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলে। ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৪ টাকা ৫৪ পয়সা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ কাজ তদারকি করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সোহেল এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালে ১০ মার্চ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়।


সুরিয়া নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় গৌরীপুর উপজেলা সহ নেত্রকোণার সাথে আঞ্চলিক যোগযোগ ব্যবস্থায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। কিন্ত সেতু নির্মাণের একবছরের মাথায়  সেতুর সংযোগ সড়কে গর্ত ও ধস দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার না করায় সংযোগ সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো বড় হয়ে ইট সহ ধসে পড়তে থাকে। এরমধ্যে নয়ানগর বাউশালিপাড়া অংশের সংযোগ সড়কের বড় অংশ ধসে পড়ে গেছে। এছাড়ও সেতুর গাইড ওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ইট খসে পড়ে গেছে। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। এতে করে সড়কটি সরু হয়ে যাওয়ায় বড় ধরণের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এক বছর ধরে সেতুটি গ্রামবাসীর খড় ও ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সময় বাঁচাতে ধসে পড়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ বলেন, সুরিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হওয়ায় দুইপাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছিল। কিন্ত  সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় মানুষ সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না। নির্মাণের এক বছরের মাথায় সংযোগ সড়ক ধসে পড়ার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। নির্মাণ কাজে অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি বর্ষার আগেই সংযোগ সড়ক সংস্কার করা নালে ধসে পড়া সড়ক সুরিয়ায় বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আজহারুল করিম বলেন, মাওহা ইউনিয়নের বাউশালীপাড়া ও খলতবাড়ি সংযোগস্থলে নির্মিত সেতুর আশেপাশে নির্জন । তাই রাতের বেলায় সংযোগ সড়কের গর্ত ও ধসে পড়া ইট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন চোর। এতে করে গর্ত আরো বড় হচ্ছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব জানান, ইতিমধ্যে এলজিইডি ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল ধসে যাওয়া সেতুর সংযোগ সড়ক পরিদর্শন করেছে।  সড়ক মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, জন সাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করতে সুরিয়া নদীর ওপর নির্মিত পাকা সেতুর সংযোগ সড়ক সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সড়কের ইট চুরি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।