সাংবাদিক হেনস্থার প্রতিবাদে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের মানববন্ধন

Sanchoy Biswas
মোখলেসুর রহমান মাহিম, জাককানইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:২০ অপরাহ্ন, ০৭ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১১:১২ অপরাহ্ন, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ও বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা ও মারধরের হুমকি দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়।

এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।

আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা, স্বামী গ্রেফতার

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঘটনার সময় উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ শীর্ষ প্রশাসনের উপস্থিতি সত্ত্বেও ছাত্রদল নেতা হৃদয় সাংবাদিকদের প্রতি উগ্র ও হুমকিমূলক আচরণ করেন। এরপরও প্রশাসন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ভুক্তভোগী সময়ের আলো পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশরাফুল আলম বলেন, ছবি ও ভিডিও ধারণের সময় হৃদয় অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের সরতে বলেন। পরিচয় দেওয়ার পর তিনি আমাকে ‘বেয়াদব’ বলে সম্বোধন করে থাপড়ানোর হুমকি দেন।

আরও পড়ুন: ‎না ফেরার দেশে বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার

এনটিভি'র প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাকেও মারতে উদ্যত হন হৃদয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম বলেন, সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনা কেবল পেশাগত অপমান নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। এখনো প্রশাসন কিংবা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক বলেন, শিক্ষার্থী কিংবা প্রশাসনের যে কেউ সমস্যায় পড়লে সবার আগে এগিয়ে আসে সাংবাদিকরা। এই সাংবাদিকরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সংবাদ প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে। সেখানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মারার হুমকি দেয়া ফ্যাসিবাদী চর্চার বহিঃপ্রকাশ। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত জাহান কিবরিয়া বলেন, গতবছর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায়ও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এখন ছাত্রদলের হুমকির বিষয়েও নীরবতা পালন করছে। তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

সাংবাদিকেরা আরো বলেন, এ ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকলে ক্যাম্পাসে পেশাদার সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তারা দ্রুত সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম হৃদয় ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন বলে জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন। শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার ফেল করে ছাত্রত্ব হারানো একজন শিক্ষার্থী কীভাবে পুনরায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেন?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব মো. শওকত জাহান কিবরিয়া, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বাপন, দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রোহান চিশতী, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম, সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।

এদিকে, মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকেরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপাচার্য আশ্বাস দিলেও ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ছাত্রত্ব প্রদানের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি।