শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র মূল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। রোগীদের জন্য নেই চাহিদা অনুযায়ী শয্যার সু-ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত সমস্যা আবার ডাক্তার সংকটও রয়েছে। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের বসাবস এই উপজেলায়। তাদের চিকিৎসার জন্য একটি মাত্র সরকারি ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। তাও সেটিতে চিকিৎসা নিতে এসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। হাসপাতালটি এই উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য যথেষ্ট ক্যাপাসিটি সম্পন্ন না হওয়ার পরও এখানে রয়েছে বাড়তি রোগীর চাপ। পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলা কালিগঞ্জ ও আশাশুনীর বড়ো একটা জন গোষ্ঠী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। অনেক ভোগান্তি পোহাতে হলেও অসহায় এ উপকুলীয় জনপদের একমাত্র ভরসা শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরা তালায় ঘেরের আইলে সবজি চাষ, কৃষিতে সম্ভাবনার হাতছানি
সরজমিনে যেয়ে দেখা যায় যে গত চার দশক আগে নির্মিত ভবনটি অনেক আগেই ব্যাবহার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে কতৃপক্ষ। একটি ভবনে রোগীদের চিকিৎসা চলমান থাকলেও উপরে নির্মান কাজটি বর্তমানে বন্ধ আছে। এ ভবনে নিচতলাতে আউটডোর চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্চে এবং দোতালায় রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, ক্যাজুয়ালিটি, লেবার রুম সহ মা ও শিশু ওয়ার্ড। তবে জরুরী বিভাগ এই ভবন থেকে দূরে সম্পুর্ণ আলাদা, ছোট দুইটি রুম বিশিষ্ট একতলা একটি ভবনেই চলছে জরুরী সেবার কাজ। অসুস্থ রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার নেয়ার পর সাধারণ ওয়ার্ডে নিতে হলে যেতে হবে আরেকটু দুরত্বে অন্য একটি ভবনে সেই ভবনটির নিচতলায় রয়েছে হাসপাতাল প্রশাসনের অফিস আর দোতালায় সাধারণ রোগীদের জন্য ওয়ার্ড অল্প জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকছে মানুষগুলো উপায় নেই। ফ্লোরিং করতেছে রোগীরা অনেক সময় নিচতলার ফ্লোরেও রোগীরা থাকেন।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ধানের শীষের কান্ডারী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে এইচ. এম. রহমত উল্লাহ পলাশ
চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে এক রোগীর স্বজন রবিউল ইসলাম বলেন, আমারা গ্রামের অসহায় মানুষ নদীতে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করি। সাধ্য নেই প্রাইভেট হাসপাতালে ফিস দিয়ে আমার বাবার চিকিৎসা করানোর তাই এখানে পড়ে আছি। বেড নেই ফ্লোরে আছি আজ পাচ ছয়দিন। পরিবেশটা ভালো হলে আমার বাবা আরো আগে সুস্থ হয়ে যেতো।
আরেক রোগীর স্বজন মরিয়াম বলেন, নামে সরকারি হাসপাতাল এখানে ওই নাম মাত্র খেতে দেয় ঔষধ দেয় নাম মাত্র এক দুইটা সব ঔষধ আমাদের কিনতে হয়। তাতে মেঝেতে থাকার কারণে নানান অসুবিধা আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে গেছি। আমরা অসহায় মানুষ এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে বাচবো।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান বাংলাবাজার প্রতিনিধিকে জানান, প্রথমত আমাদের হাসপাতালে জনবল অনেক কম ৩৩ জন ডাক্তারের জায়গায় মাত্র ৬জন ডাক্তার আছে। এছাড়া পুরাতন ভবনটি ব্যাবহার অযোগ্য। গত ৬বছর আগেই মুল ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পুর্বের আরেকটি দ্বীতলা বিশিষ্ট ভবনের নতুন বরাদ্দকৃত ৩য় ও ৪র্থ তলার কাজটি ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না করতে পারায় ২৪ সালের জুন মাস থেকে কাজ বন্ধ। যে কারনে রোগীদের জন্য চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত শয্যা ব্যাবস্থা। ইমাজেন্সি বিভাগের সেবা দেয়া হচ্চে বর্তমানে নার্সিং কোয়াটারে। এছাড়া ৪র্থ শ্রেনীর কোয়ার্টারে চলতেছে প্যাথলজি সহ যক্ষা রোগের কার্যক্রম। আবার আমারা অবকাঠামো সংকটের কারনে আমাদের এক্স-রে মেসিন থাকার পরও এক্স-রে সেবা দিতে পারিনা। এটা সত্য যে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা ও পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় একটু সমস্যা হলেও আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে সেবা দেয়ার। প্রতিদিন অন্তবিভাগে সর্বনিন্ম ৬০ থেকে ১০০ জন রোগী চিকিৎসা দেয়া হয়। পাশাপাশি বহিবিভাগেও প্রায় চারশত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়।