ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ৪র্থ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালিত

ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) দমন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, চাকরিচ্যুতির হুমকি ও নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের প্রতিবাদে ৪র্থ দিনের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তারই অংশ হিসেবে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরে মহিপালে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। উক্ত কর্মসূচিতে অংশ নেন সদর দপ্তরসহ সকল জোনাল, সাব-জোনাল, এরিয়া অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (BREB) (আরইবি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতি ও দমন-পিড়ন বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও আধুনিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (PBS) গঠন করে। এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুতায়ন প্রকল্প শেষ হয়ে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিতরণ ও সেবাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বিদ্যুতায়নের প্রাথমিক উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার পরও বোর্ড ও সমিতিগুলো যথাযথ সংস্কার ও আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে দেশি-বিদেশি কনসালটেন্ট সংস্কারের বিষয়ে স্পষ্ট সুপারিশ প্রদান করলেও অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং বোর্ডের স্বেচ্ছাচারিতা, অবাধ দুর্নীতি, গ্রাহক সেবা প্রদানে অনীহা, কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা এবং কর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সেই সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন আজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করছে, যা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন (পবিস)-এর ব্যানারে সংগঠিত হচ্ছে।
উক্ত সভায় নেতৃত্ব দেন ছাগলনাইয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিজিএম (সদর-কারিগরি) মোঃ শাহিন মিয়া, হিসাব রক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আজিজুর রহমান, বিমল সেন। এছাড়াও ৬টি উপজেলা হতে ৫টি জোনাল, ৩টি সাব-জোনাল ও ১টি এরিয়া অফিস হতে প্রায় ৪৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সকলের উপস্থিতিতে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকল মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জারদের মাধ্যমে ৪ লক্ষাধিক গ্রাহকের রিডিং বাইন্ডার বই সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানগণের কাছে জমা প্রদান করা হয়। রিডিং বাইন্ডারে মূলত গ্রাহক প্রান্তে স্থাপিত মিটারে ব্যবহৃত ইউনিটের লিপিবদ্ধ রাখা হয় এবং তার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ বিলের হিসাব করা হয়।
দাবিসমূহ
চাকরিবিধি: পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের দাবি করা হয়েছে।
দুর্নীতি ও দমন-পিড়ন: বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (BREB) বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দমন-নিপীড়ন এবং চাকরিচ্যুতির হুমকির প্রতিবাদ করা হয়েছে।
চেয়ারম্যানের পদত্যাগ: পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিও আন্দোলনের অন্যতম একটি বিষয়।
নিম্নমানের মালামাল ক্রয়: নিম্নমানের মালামাল কেনার প্রতিবাদে কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা ব্যাহত হচ্ছে ও জনসাধারণের অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বক্তারা বলেন—
দুর্নীতি ও অপব্যবহার: সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ক্রয় করে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে।
গ্রাহকসেবার ব্যর্থতা: বোর্ড সরাসরি গ্রাহকের নিকটে না থাকায় সমস্যার সমাধান দ্রুত হয় না, জবাবদিহিতা থাকে না। যার ফলে কমিশন বানিজ্যের আশায় নিম্নমানের মালামাল ক্রয় করে সমিতিগুলোকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
নীতিমালা প্রণয়নে অদক্ষতা: আধুনিক গ্রাহকসেবা প্রদানের জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে বোর্ডের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।
জনবল ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা: সমিতির জনবলের প্রতি অমানবিক আচরণ, সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ প্রদান না করা এবং শোষণমূলক নন-গেজেটেড সার্ভিস কোড চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব: সমিতিগুলোর উন্নয়ন ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
আইনগত কাঠামো উপেক্ষা: ১৯৭৭ সালের উপ-আইন অনুযায়ী সমিতিকে স্বাবলম্বী করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা না করে সমিতিগুলোকে আর্থিকভাবে কুক্ষিগত করে রাখছে।