আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন, নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে
আলোচনায় ডিপ স্টেট ‘আমরা’

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গঠিত নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন শেষ ধাপে পৌঁছেছে। জুলাই আগস্ট গণহত্যার বিচার ও সংস্কার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকায় সরকারের প্রতিশ্রুত মোতাবেক ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি অস্থিরতা। এই পরিস্থিতিতে সফলতার সাথে সরকারের বিদায়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনায় সরকারের ডিপ স্টেট "আমরা পরিষদ"।৷৷৷৷৷ কয়েক দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ করে বর্তমানে ২২ জন মন্ত্রী মর্যাদা উপদেষ্টা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে। মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় কয়েকজন বিশেষ সরকারি নিয়োগ করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় গুলোতে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিক সংস্কারে করছে জাতীয় ঐক্যমত কমিশন। শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মজবুত করায় ছিল সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বিভিন্ন দাবি দেওয়া আদায়ের আন্দোলনকারীদের সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা গেরাও অবরোধ কর্মসূচিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সরকারের কার্যক্রম। দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবি উঠলে সরকার থেকে বলা হয় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম কাজ সংস্কার মেরামত দ্বিতীয়ত জুলাই গণ হত্যাকারীদের বিচার তারপর জাতীয় নির্বাচন করে সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর। জুলাই গণ হত্যাকারীদের বিচারের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। সংস্কার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে। কমিশনের মেয়াদ আর না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। গত এক বছরের সময়ে সরকারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের কঠিন পরিস্থিতি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দাবি আদায়ের ১৬০৪ বার সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। তিন শতাধিক আন্দোলন হয়েছে দাবি আদায়। এখনো যমুনা ঘেরাও কেন্দ্রিক আন্দোলন চলছে। অনেক রক্তাক্ত ঘটনাও ঘটেছে। স্বৈরাচারী শাসন বিরোধী গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনগণের কাঙ্ক্ষিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় মব ভায়োলেন্সা জনজীবনে ভিতি সৃষ্টি হয়েছে। সকল পরিস্থিতিতে ৫ জন উপদেষ্টার ডিপ স্টেট অন্তর্বর্তী সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিত। রাজনৈতিক ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে তাদের পরামর্শই বাস্তবায়ন করতো।অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা কে সংক্ষেপে" 'আমরা' বলা হয়। সরকারের ভিতরে ডিপ স্টেট বলতে আমরা পরিষদকেই ইঙ্গিত করে। পাঁচ উপদেষ্টার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে শব্দটি তৈরি। শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহবুজ আলম, পানির সভ্যতা উপদেষ্টা রেজওয়ান আহসান ও এল জি আর ডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অনানুষ্ঠানিকভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন। জনপ্রসন মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ বদলিও পদোন্নতি সংক্রান্ত উচ্চতর কমিটিতে উপদেষ্টারাই আছেন। সরকারের শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত উপদেষ্টারায় নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক সেমিনারে অভিযোগ করেন ‘বৈষম্যবিরোধী চেতনায় আমরা নতুন সরকার আনলাম। কিন্তু
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে আরেকটা সরকার আছে বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘এখন সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্নটা বিশেষ করে দলীয় নিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। কারণ, এখন মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে যে আমরা সরকার বলতে যাদের দেখি আনুষ্ঠানিকভাবে, আসলে তার ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে। এটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। এটা সবার কাছেই প্রকাশ্য। এখন সরকারের নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রমাণ করা...কাদম্বরীকেই করিতে হইবে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে- ড. মঈন খান
অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেও এখন একটা ভালো নির্বাচন করতে পারবে কি না, বৈঠকে সেই প্রশ্ন রেখে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপস, আঁতাত বা সিট ভাগাভাগির নির্বাচন নয়, একটা প্রকৃত নির্বাচন দরকার, যেখানে মানুষ ভোট দেওয়ার পর শান্তিতে থাকবে।’
ভালো নির্বাচন করতে হলে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা খুব ভালো বুঝেছি যে প্রশাসনিক ক্ষমতা ও প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এটা করা সম্ভব হবে না।’। ডক্টর দেবপ্রিয়র এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবের আইন উপদেষ্টা আশিফ নজরুল বলেছিলেন প্রত্যেক সরকারেরই ডিপ স্টেট থাকে। এটা দোষের কিছু নয়। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলেন উপদেষ্টা পরিষদে অনেকেই অযোগ্য অদক্ষ আছেন। সরকারের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সংস্কার বাস্তবায়ন ও একটি সুন্দর নির্বাসন অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন জরুরী।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগেই যুক্ত হচ্ছেন ৪ হাজার নতুন এএসআই
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাদের হাতে। প্রধান উপদেষ্টা দুই দফায় যমুনাতে রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে বৈঠকের সময়েও দুই ছাত্র উপদেষ্টা তারা অন্যরা সহায়তা করেন। সরকারি কার্যক্রমে সক্রিয় উপদেষ্টা ফয়জুল কবির ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড খলিলুর রহমান তাদেরই সহযোগি।