ইসলামে ভূমিকম্প ও করণীয়
পৃথিবীর প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মাঝে মাঝে ছোট বড় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ভূমিকম্পে অনেক জনপদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূমিকম্পে নদী সাগর ও গুরুত্বপূর্ণ নগরের গতি পাল্টে গেছে। বাংলাদেশে গত কয়েকদিনের উপরে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে নানা গবেষণা আলোচনা। ইসলামের দৃষ্টিতে ভূমিকম্পে কি করণীয় আলোচনা করা যায়।
১. সতর্ক করা ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য :
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের সময় মুসলমানরা যে দোয়া পাঠ করে
কখনো কখনো মহান আল্লাহ মুসলমানদের সতর্ক করতে বা তাদের মনে ভীতি সৃষ্টি করে পাপাচারের পথ থেকে বিরত রাখতে ভূমিকম্প দিয়ে থাকেন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আসলে আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন পাঠাই।’ (ইসরা, আয়াত : ৫৯) এখানে বলা নিদর্শনের মধ্যে ভূমিকম্পও একটি অন্যতম নিদর্শন। যা মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে কিছুতেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: আজ শ্যামাপূজা ও দীপাবলি
২. আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য :
কখনো কখনো বান্দাদের আল্লাহর দিকে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে, তাদের তাওবা ও সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার জন্যও ভূমিকম্প হয়।
হাদিসে এসেছে, ‘আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন— একবার সূর্যগ্রহণ হল, তখন মহানবী (সা.) ভীত অবস্থায় উঠলেন এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয় করছিলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর আগে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকু ও সিজদা সহকারে সালাত আদায় করলেন। আর তিনি বললেন : এগুলো হলো নিদর্শন, যা আল্লাহ্ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন।
কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর জিকির, দোয়া এবং ইস্তিগফারের দিকে ধাবিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫৯)
এই হাদিসে বলা নিদর্শন বলতে যা কিছু বোঝায়; তার মধ্যে ভূমিকম্পও একটি বড় নিদর্শন। কাজেই এ সময়ও বান্দার উচিত আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া ও বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া।
৩. অন্যায়, অত্যাচার ও পাপের ফলাফল ভোগ করানোর জন্য :
কখনো কখনো সমাজে অন্যায় ও পাপের কারণে ভূমিকম্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি ওদের আস্বাদন করানো হয়।
যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)
ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়, খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর আমলে মদিনায় ভূমিকম্প হলে তিনি বলেন, ‘সাফওয়ান ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শুরাহবিল ইবনিস সিমত বলেছেন—খলিফা ওমর (রা.)-রে শাসনামলে একবার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। তখন তিনি লোকদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন এবং বললেন, ‘হে মদিনার লোক! তোমরা কত দ্রুত (গুনাহ ও পরিবর্তন) সৃষ্টি করলে! আল্লাহর কসম! যদি ভূমিকম্প আবার ফিরে আসে—আমি তোমাদের মধ্য থেকে বের হয়ে যাব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আইবি শাইবা ৩১২১৯)
ইমাম বায়হাকি (রহ.)-এর রেওয়ায়েতে এসেছে, যেখানে হজরত ওমর মানুষকে বলেন, ‘মানুষ যে গুনাহ সৃষ্টি করেছে— তার কারণে ভূমিকম্প এসেছে।’ (শু‘আবুল ঈমান, বায়হাকি ৮/৩৬৪)
ওমর ইবনুল আব্দুল আজিজের আমলে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলে তিনি গভর্নরদের চিঠি লিখে নির্দেশ দেন, যাতে জনগণ প্রচুর পরিমাণে সদকা করে। (হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫/৩০৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের ওপর আল্লাহর রহমত আছে। আখেরাতে তারা স্থায়ী শাস্তি ভোগ করবে না। বরং তাদের কাফফারা হবে এইভাবে যে, দুনিয়াতে তাদের শাস্তি হবে ফিতনা-ফাসাদ, ভূমিকম্প এবং হত্যা।’ (আবুদাউদ, হাদিস : ৪২৭৮)
সুতরাং, ভূমিকম্প কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি আল্লাহর সতর্কবার্তা, বান্দাদের পরীক্ষা এবং আত্মশুদ্ধি লাভের সুযোগ। মুসলিমদের উচিত যখন ভূমিকম্পের মতো ঘটনা ঘটতে থাকে তখন নিজেদের পাপাচার থেকে বিরত রাখা, পরিবার ও সমাজকেও সতর্ক করা এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করা।





