নরসিংদীর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন, জনমনে আতংক

Sadek Ali
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ১:২৯ অপরাহ্ন, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:১১ অপরাহ্ন, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
  •  রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক থাকলে যে কেউ রিপোর্ট করতে পারেন 
  • বেসরকারি হসপিটাল গুলো ৫৫ থেকে ৬০ ভাগসেবা গ্রহণ করে আর ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ সরকারি হাসপাতাল : সিভিল সার্জন 

জেলাজুড়ে বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা, ভুল চিকিৎসা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে রোগীদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে, যা কার্যত মৃত্যুপুরী হিসেবে কাজ করছে। অন্যান্য জেলায় চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্র অতীতের তুলনায় উন্নত হলেও নরসিংদী তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা খাতে যে ব্যয় হয়, সেই তুলনায় সেবার মান ততটা উন্নত নয়। ফলে হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো নিয়ন্ত্রণে জেলা সিভিল সার্জন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে।

সিভিল সার্জনের মতে নরসিংদীতে ৯২ টি ক্লিনিক ও ১১৩ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। লাইসেন্স ছাড়াও অবৈধভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্রে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। আর এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবার দুর্দশার পেছনে রয়েছে অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর দুর্নীতি। বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান ও নার্স নেই বললেই চলে। সম্প্রতি গত কয়েক মাসে নরসিংদীর ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল গুলোতে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে  চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর শিবপুরে শিবপুর পপুলার প্রাইভেট হাসপাতালে মারজিনা পারভীন রিনি (৩৭) নামে একনারী হাসপাতালে অবহেলা ও ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। একই বছরের মাধবদীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে বিথী রাণী নামে একনারী প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানে সিজার করার সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। গত ১৭ জুন লিমা আক্তার নামে একনারী প্রসব বেদনা নিয়ে শিবপুর থেকে নরসিংদী শহরের সিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিনই তাকে সিজার করা হয়। পরে ২১ জুন লিমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তার পেটের ভিতর থেকে ১৮ ইঞ্চি "মব" (রক্ত পরিস্কার) কাপড় উদ্ধার করা হয়। গত ২৩ আগষ্ট শহরের চিনিশপুর এলাকার ফারজানা আক্তার (৩২) নামে একনারী প্রসব বেদনা নিয়ে ইমার্জেন্সি কেয়ার নামে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান। তারপর সেখানেই নবজাতক সহ তার মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট রাহা মনি (৭) নামে এক শিশু টনসিলের অপারেশন করার জন্য আসেন নরসিংদী শহরের লাইফ কেয়ার হাসপাতালে। অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় ঘটনার তদন্ত, ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সিভিল সার্জনের। এসব ক্ষেত্রে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সহ লাইসেন্সবিহীন বা নিয়মবহির্ভূত হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলো বন্ধ করে দিতে পারেন। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করা হয়েছে অথবা নিয়ম মানা হয়নি, তবে তিনি চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থার পাশাপাশি কোনো রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে যদি অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ আসে, সিভিল সার্জন তাৎক্ষণিকভাবে তা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এত শক্তিশালী নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নরসিংদী জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহন না করায় একে একে পার পেয়ে যাচ্ছেন অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে দেখা দিয়েছে জনমনে ক্ষোভ ও শংকা।

আরও পড়ুন: মাজারে হামলার ঘটনায় আতঙ্ক কাটেনি, ‘মব সন্ত্রাস’ নিয়ে আবারো প্রশ্নে সরকার

ভুক্তভোগী পরিবারের একাধিক সদস্যের সাথে বাংলাবাজার পত্রিকার প্রতিনিধি কথা হলে তারা ক্ষোভে বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। সরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা পায় না। বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার থাকে তালাবদ্ধ। অথচ সেখানে সিজারসহ মাঝারি ধরনের অপারেশন করা সম্ভব। কোন কোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জন আছে, এনেসথেসিওলজিস্ট নেই।

আবার কোথায় এনেসথেসিওলজিস্ট আছে, সার্জন নেই। অর্থাৎ অপারেশন বন্ধ। পরে নিরূপায় হয়ে রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যান সেবা নিতে। সেখানে সেবার নামে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো মৃত্যপুরীতে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীর স্বজনরা ওইসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে তারা প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষকে ডেকে এনে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে আপোষমীমাংসা করে দেন। আর এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। তারা আরও বলেন, বধির লোক যেমন কানে শোনে না, সিভিল সার্জন কর্মকর্তাদের অবস্থাও যেন একই। তাদের তদারকি ও অবহেলার কারণে জেলাজুড় লাইসেন্স ছাড়া ব্যাঙের ছাতার মত অবৈধভাবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। 

আরও পড়ুন: ফটিকছড়িতে বিদেশি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ গুলিসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক-১

এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মো. আমিরুল হক বলেন, এই দায়-দায়িত্ব আমি এড়াতে পারি না। নরসিংদীতে ৯২ টি ক্লিনিক এবং ১১৩ টা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এর বাইরে কেউ আমাদের সম্মতি ছাড়া হলে সাথে সাথে রিপোর্ট হলে করতেই পারবে না। মোবাইল কোর্ট চলে যাবে। রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া তারা করবে কি করে? রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক আপনাদের জানা থাকে যে কেউ রিপোর্ট করতে পারেন।

আমাদেরও মোবাইল কোর্ট আছে। আমরা তদন্ত করি। বিভিন্ন উপজেলা ইউএইচএনডি তদন্ত করে এবং without any Economical Dadification. যারা সুন্দরভাবে চালায় তারা Renew করতে পারে এবং রেজিষ্ট্রেশন যদি fulfillment হয় তাহলে রেজিষ্ট্রেশন পায়। এক্ষেত্রে সিভিল সার্জন handed passant সততার সাথে এ কাজটা আমি করে থাকি এবং not a single Incident নাই। মানে এদের সাথে কোনো Connection আছে। আমি বেশ কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি এবং হসপিটাল বন্ধ করেছি। তারা আবার fulfill করলে আবার সবকিছু খুলে দিয়েছি। আপনারা জানেন ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ জনগনের চাহিদা বেসরকারি খ্যাতে এই হসপিটাল ও ক্লিনিকগুলো সেবা প্রদান করেন। আর মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ সরকারি হাসপাতাল গুলো থেকে সেবা পায়। এক্ষেত্রে এদের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করছে কি-না যেমন আমার দায়িত্ব ঠিক তেমনি আমার দায়িত্ব এরা অসুন্দর কাজ করলে এবং অনৈতিক কাজ করলে শাস্তি দেওয়া, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা এটাও আমার দায়িত্ব। এতে কোনো ব্যতয় ঘটবে না। এছাড়া ৯২ টা ক্লিনিক ও ১১৩ টা ডায়াগনস্টিক এর বাইরে যে গুলো আছে আমরা এ্যাকশন নিবো।