গাজীপুরে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেলেন ৪৭ জন

শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১২০ টাকা সরকারি ফি দিয়ে গাজীপুরে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৪৭ জন। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে এক অনাড়ম্বর কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
ফলাফল ঘোষণার সময় চাকরীতে নিয়োগ পাওয়া অনেককে আনন্দ ও আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে মুচির ছেলে, রাজমিস্ত্রি, নানার আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীরা রয়েছে। কোনো রকম তদবির ও ঘুষ ছাড়া মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রগতির প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশীদার হতে পেরে বর্তমান সরকার ও গাজীপুরের পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় স্পিডবোট-নৌকা সংঘর্ষে ৪ জন নিখোঁজ, আহত ৩
ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ কমিটির সভাপতি ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক, নিয়োগ কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোঃ সোহেল রানা এবং কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন।
চূড়ান্ত ফলাফলে গাজীপুর জেলায় ৪৭ জন প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়াও আরও ৫ জনকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। নাম ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন। উচ্ছ্বাসে মুখচ্ছবি, চোখের জল ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের শব্দে পুরো অনুষ্ঠানটি আবেগময় হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: শশুর বাড়ি যাওয়া হলো না মৌমিতার!, বাড়িতে শোকের মাতম
উত্তীর্ণ প্রার্থী মেহেদী হাসান জীবন বলেন, “তৃতীয়বারের চেষ্টায় আমি সফল হয়েছি। মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে চাকরি পেয়েছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন পুলিশের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি।”
কানিজ সুবর্ণা কেয়া জানান, “কোনো টাকা-পয়সা বা ঘুষ ছাড়াই আমার চাকরি হয়েছে। সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ।”
ভাওয়াল মির্জাপুরের জুতা সেলাইয়ের শ্রমিকের ছেলে তাপস রবি দাস বলেন, “আমার বাবার স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করা। আজ আমার এবং পিতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে নিজের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। আমি সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করছি এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
কাপাসিয়ার সামিয়া তার জীবনের মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করে জানান, “আমার বাবা-মাকে হত্যা করে। আমরা ৩ বোন নানার সংসারে ছিলাম। পরে সংসারের অভাব অনটনের কারণে দুই বোনকে দত্তক দেওয়া হয়। আমি নানার কাছে বড় হয়েছি। আমার বাবার ১০ বছর পর জেল থেকে বের হয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। শৈশবের কষ্টের পরও সতভাবে নিয়োগ হওয়ায় আমি আজ চাকরি পেয়েছি। মেধা ও যোগ্যতা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে নিয়োগ হলে আমি এই সুযোগ পেতাম না। সতভাবে নিয়োগ দেওয়ায় আমি পুলিশ সুপারের নিকট গভীরভাবে কৃতজ্ঞ এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি।”
এ সময় যখন জানতে চাওয়া হয়, সে এখন কার প্রতি দেখাশুনা করবে, তখন সে জানায়, সে তার নানার প্রতি বেশি যত্নশীল হবে।
প্রধান অতিথি গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক বলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল এই নিয়োগ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। মহান আল্লাহর কৃপায় আমরা সফল হয়েছি। প্রাথমিকভাবে ৪৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টেস্টে উত্তীর্ণ হলে চূড়ান্ত নিয়োগপত্র পাবেন, আর ওয়েটিং লিস্ট থেকে প্রার্থীদের নেওয়া হবে। কোনো তদবির বা প্রভাব আমাদের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেনি। শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।”
নবীনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আজকে যেভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে ও সততার সাথে তোমাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে, তোমাদের কর্মজীবনে এই কথাটি মনে রাখবে, যে তোমরা কিভাবে চাকরি পেয়েছো। এই কথাটি মনে রেখে তোমরা সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে তোমাদের গর্বিত কর্মজীবন অতিক্রম করবে।”