আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দখলে মরিয়া জামায়াত-বিএনপি

Any Akter
নেওয়াজ আহমেদ পরশ, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২:১০ অপরাহ্ন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:৪৫ অপরাহ্ন, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ বাংলাবাজার পত্রিকা গ্রাফিক্স
ছবিঃ বাংলাবাজার পত্রিকা গ্রাফিক্স

গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব অন্য যেকোনো জেলার তুলনায় অনেক বেশি। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মানুষের আবেগ ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। গোপালগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত জেলার অধিকাংশ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় ধরে রেখেছিল দলটি। তবে গণঅভ্যুত্থানের পর আসন্ন নির্বাচনের আগে ঘাঁটিটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত ও বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে জামায়াত-বিএনপি তৃণমূলের কর্মীসংগঠনকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। ছোট ছোট উঠান বৈঠক, কর্মীসভা ও মিটিংয়ের মাধ্যমে তারা মাঠে থাকছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কর্মসংস্থান সংকট, কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ এবং স্থানীয় সমস্যা তুলে ধরছে তারা।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ভাঙা সহজ নয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি হওয়ায় জেলার সাধারণ মানুষ দলটির সঙ্গে আবেগ ও ঐতিহ্যের সূত্রে গভীরভাবে যুক্ত। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংককে শক্তিশালী করেছে।


আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান

অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতারা দাবি করছেন, “আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও দমননীতি দেখে জনগণ পরিবর্তন চায়। গোপালগঞ্জেও তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।” আসন্ন নির্বাচনে গোপালগঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠবে কিনা—তা সময়ই বলে দেবে। তবে জামায়াত-বিএনপির সক্রিয় তৎপরতায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে।

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। বহু নেতাকর্মী গা-ঢাকা দিয়েছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দই ফাঁকা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভ্যুত্থানপন্থি দলগুলোর নেতাকর্মীরা। গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত তিনটি সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত ইসলামী সহ কয়েকটি দল। আর মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তদবিরে ব্যস্ত বিএনপি নেতারা। তবে ইসলামপন্থি দলগুলোর জোট করার আলোচনা চলছে। সেটি হলে পাল্টে যেতে পারে নির্বাচনের চিত্র।

গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীর আংশিক)

আসনটিতে জামায়াত ইসলামী জমিয়াতুল মুফাসছিরিন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হামীদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।এই আসনের মুকসুদপুর পৌর এলাকায় বিএনপির অবস্থান আগের থেকেই মজবুত। এটিকে পুঁজি করে দলটির প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। এবার ধানের শীষ পাওয়ার দৌড়ে প্রতিযোগিতা করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিম, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর, তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ের পাশাপাশি দলের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এছাড়াও ব্যবসায়ী এম আনিসুল ইসলাম ভুলু মিয়া (স্বতন্ত্র), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম লেলিন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের জেলা সভাপতি আল আমিন সরদার নির্বাচনি মাঠে তৎপর আছেন।

গোপালগঞ্জ-২ (সদর ও কাশিয়ানী আংশিক)

আসনটিতে জামায়াত ইসলামী কেন্দ্রীয় ইউনিট সদস্য ও সাবেক জেলা আমির অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন সরদারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সরদার মো. নুরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এমএইচ খান মঞ্জু, সাবেক সভাপতি এম সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ রফিক উজ্জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. কেএম বাবর দলের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা তসলিম হুসাইন শিকদার, যুব অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. মুনায়েম মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া)

শেখ হাসিনার আসন হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনি এলাকা এবার নেতাশূন্য। প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না আওয়ামী লীগের কেউ। তবে আওয়ামী লীগের ভোটগুলোকে পুঁজি করে সংসদে যেতে এ আসনে দলটির পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করার জন্য এখনো কেউ সামনে না এলেও তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর জানান দিতে পারেন বলে জানা গেছে। 

আসনটি এবার বিএনপিকে উপহার দিতে চান জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী। জামায়াত এই আসনে গোপালগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক এমএম রেজাউল করিমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এই সদস্য নিয়মিত শোডাউন ও গণসেংযোগ করছেন। বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। এছাড়াও ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মারুফ শেখ, এবং গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সেলের প্রধান কাজী রনিও গণসংযোগ করছেন এবং ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।