নিকলী উপজেলার অলিতেগলিতে বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক সিরাপ

Sanchoy Biswas
মো. ইসমত আলী নিকলী উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ন, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নিকলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি কোনো নির্দেশনা না মেনেই, অবাধে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের অনুমোদনহীন যৌন উত্তেজক ওষুধসহ বোতলজাত সিরাপ। দীর্ঘদিন ধরে অবাধে প্রকাশ্যে উপজেলা জুড়ে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি হয়ে এলেও প্রশাসনের ভূমিকা যেন একেবারেই নীরব, এমন প্রশ্ন করছেন সচেতন মহল।

প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী, ড্রাগ লাইসেন্স ও সাইনবোর্ড ছাড়া ঔষধের ব্যবসা পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন বাস্তবে যেন নিস্ত্রিয় হতে চলেছে। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।

আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

অনুমোদনহীন সকল ঔষুধ শোভা পাচ্ছে নিকলী উপজেলার পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন ঔষধ ফার্মেসী, পান-বিড়ির দোকান, মুদি দোকান সহ ভ্রাম্যমাণ কবিরাজের ভ্যানে ও ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানগুলোতেও।

এই সকল ঔষুধ বা সিরাপের তালিকায় রয়েছে নানা নামের জিনসিন, বাজী, নিয়লেক্স, জেট ভিটা, টার্চ, হর্স, থ্রী-হর্স, এ ওয়ানসহ হারবাল ও আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন প্রকার ঔষধ।

আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সীমিত পুঁজি খাটিয়ে এই সকল ঔষধ চুপিসারে উঠতি বয়সি ক্রেতা, প্রাপ্তবয়স্ক ক্রেতা সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে।

এদিকে যৌবনের লালসায় কম দামে এসব ঔষধ কিনে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতাসাধারণ, অপরদিকে কিছু দিন যেতে না যেতেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। অনেকেই হার্ট অ্যাটাকসহ নানান সমস্যায় পড়ছেন। উঠতি বয়সী যুবকেরা এই সকল উত্তেজক ঔষধ সেবনে অনেক সময় সূক্ষ্মভ্রান্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে ধর্ষণ বা বড় কোনো অপরাধে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ঔষধ সেবনে তাৎক্ষণিকভাবে দৈহিক মিলনে স্থায়িত্ব বাড়লেও শরীরের রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন সেবনে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এতে লিভার ও নার্ভ ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

সরজমিনে দেখা যায়, নানা লোভনীয় নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসব সিরাপের প্রতি আসক্তি বাড়ছে বিভিন্ন বয়সী ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। অনেকে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে শরীরের উত্তেজনা বাড়াতেও এসব সিরাপ পান করছেন। বোতলে ৬০, ৮০, ১০০ টাকার মূল্যে থাকলেও ২০, ২৫, ৩০ টাকায় পাওয়া যায়। যার ফলে যে কেউ সহজেই কিনতে পারছে। দাম কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অবাধে এসব সিরাপ পান করে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এসব সিরাপ পানের কুপ্রভাবের কারণে সমাজে যৌনাচার, ব্যভিচার, ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বিএসটিই, প্রশাসন বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষ থেকে কেনো প্রকার নজরদারি করা হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতা জানান, গ্রামের বিভিন্ন দোকানগুলোতে জিনসিন, জেট ভিটা, জিরা জাতীয় সিরাপগুলো ভালো চলে, লাভ বেশি তাই দোকানদাররা আগ্রহ সহকারে বিক্রি করে।

নিকলী উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ সোহাগ মিয়া বলেন, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবেই মূলত সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। আমি মনে করি পরামর্শের মাধ্যমে যৌন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। তাছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে সকল যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবন করা হয় তা শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষ করে লিভার ও কিডনীর উপর চরম প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন সেবনে কিডনী ও লিভার ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে, সরজমিনে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।