প্রশাসন কর্তৃক যাদুকাটা বালু মহাল ইজারাদারকে দখল দিতে দুষ্কৃতিকারীদের বাধা প্রদান

Sanchoy Biswas
মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৪:৩৯ অপরাহ্ন, ০৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৬:০৬ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রশাসন কর্তৃক সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটা-১ বালু মহাল ইজারাদারকে দখল বুঝিয়ে দিতে সাবেক ফ্যাসিবাদ ইজারাদারের দুষ্কৃতিকারীদের বাধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত (১ সেপ্টেম্বর) বুধবার যাদুকাটা-১ এর সীমানা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাহারুখ আলম শান্তুনু সরেজমিন এলাকায় আসেন। তিনি সীমানা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সাবেক ইজারাদার ফ্যাসিবাদ রতন মিয়া তার সহযোগী দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাধা প্রদান করে। পরবর্তীতে তারা বুঝিয়ে দেওয়া সীমানা সঠিক নয় দাবি করেন এবং এভাবে বুঝিয়ে দিতে আপত্তি তুলে বলেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বালু নিতেও তারা বাধা দেবেন।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

ইজারাদার পক্ষের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাবেক ইজারাদারের কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে নদীর মধ্যস্থান থেকে বালু উত্তোলনের সময় বাধা দেন সাবেক ইজারাদার ও খোরশেদ আলমের লোকজন। পরে বাধার মুখে নদীর পাড় ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় বালু উত্তোলনকারী নৌকাগুলো।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান

স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী জানান, যাদুকাটা-১ ও ২ বালুমহাল ইজারা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন যাদুকাটা-১ এর এলাকা ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সাবেক ইজারাদার রতন মিয়া ও দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজন বাধা প্রদান করে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করার পাঁয়তারা লিপ্ত রয়েছে। ওই দুষ্কৃতিকারীরা উচ্চ আদালতে রিট করে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস যাদুকাটা নদী বন্ধ থাকায় তিনটি উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নৌ-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খুবই কষ্টে জীবন যাপন করেছেন। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে চক্রটি বাধা প্রদান করছে।

যাদুকাটা তীরবর্তী শিমুল বাগানের স্বত্বাধিকারী সাবেক তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইজারাকৃত যাদুকাটা বালু মহালে গরিব শ্রমিকরা যদি বালু না তোলে তাদের সংসার চলবে কিভাবে? সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ইজারা এনে নদীর মাঝখান থেকে বালু তোলার সময় সাবেক ইজারাদার ও খোরশেদ আলমের কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী মানুষ বাধা দিয়েছে। প্রশাসন যে জায়গা চিহ্নিত করে দিয়েছে, সেখান থেকেই বালু তোলা হচ্ছে। কেউই পাড় কাটেনি। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন লাউড়েরগড় শাহিদাবাদ এলাকায় পাড় কাটা হচ্ছে। কিন্তু আমার জানা মতে শাহিদাবাদ এলাকায় পাড় বলতে কোনো স্থান নেই পুরোটা চর।

শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম সর্দার বলেন, স্থানীয় প্রশাসন যাদুকাটা-১ এর সীমানা নির্ধারণ করতে এসে বাধার সম্মুখীন হন। কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী লোকদের কারণে শ্রমিকরা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ করতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ী এবং ইজারাদার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

যাদুকাটা-২ এর ইজারাদার নাছির উদ্দীন বলেন, গত বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন যাদুকাটা-১ এর সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে সাবেক ইজারাদার ফ্যাসিস্ট রতন মিয়া, সেলিম আহমেদসহ দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজন বাধা সৃষ্টি করায় পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আপনারা জানেন দুষ্কৃতিকারীরা অহেতুক উচ্চ আদালতে রিট করায় দীর্ঘ ৫ মাস নদী বন্ধ থাকার পর আদালত সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইজারাদারের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু দুষ্কৃতিকারীরা উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে সীমানা নির্ধারণে বাধা প্রদান করে। এদিকে দুষ্কৃতিকারীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তিনটি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী খুবই কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়েছে। আমরা ইজারাদাররাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সরকারকে রাজস্ব দিয়ে। আমি দুষ্কৃতিকারীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা গরিব-মেহনতি নৌ-শ্রমিকদের পেটে লাথি মারবেন না। তাদের প্রতি একটু সহনশীল হন। মহান আল্লাহ পাক আপনাদের মঙ্গল করবেন।

তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাহারুখ আলম শান্তুনু বলেন, বুধবার ওখানে সীমানা নির্ধারণের জন্য গেলে কিছু লোক আপত্তি এবং বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ওখানে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় আমরা চলে আসি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক বললেন, বাধার কারণে আমরা সম্পূর্ণভাবে যাদুকাটা-১ এর সীমানা নির্ধারণ করতে পারিনি।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বললেন, স্থানীয় লোকজনদের বাধার মুখে আমরা যাদুকাটা-১ বালু মহালের সীমানা সম্পূর্ণ রূপে ইজারাদারকে বুঝিয়ে দিতে পারিনি। তবে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।