নোয়াখালীতে চর দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, দু’দিন পর মিলল আরেক লাশ

Sanchoy Biswas
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:১৮ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ‘জাগলার চর’ দখলকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় নিখোঁজ শামছু প্রধানের (৫৮) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এই সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৬ জনে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: মানুষের সহযোগিতায় বাঁচতে চান ক্যান্সার আক্রান্ত তরকারি ব্যবসায়ী সোহেল

নিহত শামসুদ্দিন ওরফে শামছু উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।

গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে ওই চরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শামছু গ্রুপ ও আলাউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলে ঘটনাস্থলেই আলাউদ্দিনসহ ৫ জন নিহত হন এবং আহত হন অন্তত ৭-৮ জন। ওই দিনের পর থেকেই শামছু প্রধান নিখোঁজ ছিলেন। ঘটনার দুই দিন পর আজ বনের ভেতর তার মরদেহের সন্ধান মেলে।

আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত শামছুর ভাই আবুল বাশার বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নং-২১।

দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদী থেকে ২০১০ সালের দিকে জেগে ওঠে জাগলার চর। প্রায় ৬ হাজার একরের এই চরে ২০১৭ সালের দিকে সবুজ বনায়ন শুরু করে বনবিভাগ। তখন থেকে সবুজ বনায়নের গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বনবিভাগের লোকজন ও স্থানীয় শ্রমিকরা যাতায়াত শুরু করলেও সেখানে কোন জনবসতি গড়ে ওঠেনি। জাগলার চরের জমি সরকার এখনও পর্যন্ত কাউকে বন্দোবস্ত দেয়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ০৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গত একবছর ধরে ওই চরের ভূমির ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের চত্র-ছায়ায় উপজেলার হরণি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিক ও ফরিদ কমান্ডার নামের দুই ব্যক্তির ললুপ দৃষ্টি পড়ে। তাদের নেতৃত্বে স্থানীয় ভূমি দস্যু কোপা সামছুদ্ ওরফে সামছুদ্দিন গ্রুপ চরটির বেশিরভাগ অংশ দখল করে প্রতি একর জমি ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ভূমিহীন ও বিভিন্ন মহলের কাছে বিক্রি করে আসছিল। কোনো বৈধ দলিল ছাড়াই এসব জমি বিক্রি হওয়ায় ভূমিহীন পরিবারগুলো ছিল চরম অনিশ্চয়তায়।

স্থানীয় ভূমিহীনরা জানান, জমি বিক্রির অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিতভাবে প্রভাবশালী মহলে পৌঁছাত। সম্প্রতি সেই অর্থ দেওয়া বন্ধ হলে চরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনীর সঙ্গে জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা সামছু বাহিনীর দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উভয় পক্ষই নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে সশস্ত্র লোকজন জড়ো করে, যা পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। গত কয়েক মাস ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়। এ জেরে মঙ্গলবার সকালে সংঘাতে জড়ায় দু'পক্ষ। এসময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পরে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

নিহতদের মধ্যে শামসুদ্দিন ওরফে শামছু ছাড়াও রয়েছেন-হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের সারেং বাড়ির মহিউদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন (৪০), হাতিয়া পৌরসভার পশ্চিম মজিদিয় গ্রামের শাহ আলমের ছেলে হক সাব (৫৫), জাহাজমারা ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ডের কোপা সামছু ওরফে সামছুদ্দিনের ছেলে মোবারক হোসেন শিহাব (২২), উপজেলার চান্দনী ইউনিয়নের নলের চর মান্নান নগর এলাকার সেকু মিয়ার ছেলে কামাল উদ্দিন (৪০), সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ চর মজিদ গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আবুল কালাম (৬২)।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, “নিখোঁজ শামছু প্রধানের লাশ বনের ভেতর পড়ে থাকার খবর পেয়েছি। আমরা দ্রুত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।”