বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ

এলজিইডিতে তুঘলকি কান্ড চলছেই

Rashedul Hoque
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১:১০ অপরাহ্ন, ২৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৭:১০ পূর্বাহ্ন, ২৯ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে (এলজিইডিতে) চলছে একের পর এক তুঘলকি কান্ড। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারি সকল দফতরে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও এলজিইডিতে এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন ফ্যাসিবাদের দোসররা। ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরানোর পরিবর্তে তাদের আরও পুরস্কৃত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকালও এলজিইডির এডিবি এবং এএফডির বৈদেশিক সহায়তাপুস্ট আরবান সেক্টরের বড় প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আবারও নিয়োগ দেওয়া হযেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদকে। এর আগে তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিলে দাতা সংস্থা আপত্তি জানায়। পরে পূর্বের প্রকল্প পরিচালককে আবার বহাল রাখে। তার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী থেকে ডুয়েটে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেও বিদেশী সহায়তায় বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রকৌশলীরা। জানা গেছে, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ডান হস্ত হিসেবে কাজ করা এ প্রকৌশলী নওগাঁয় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ৪ বছর নানা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে কামিয়েছেন। সাধন চন্দ্র মজুমদারের হাত ধরেই তিনি এখন বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক। অভিযোগ উঠেছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে তিনি গতকাল Improving Urban Governance & Infrastructure Program (IUGIP) প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আবারও নিয়োগ পেয়েছেন। দেশের ৮৮টি পৌরসভার পরিচালন ব্যবস্থার উন্নতি , সচ্ছত, জবাবদিহীত এবং অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে আসছে প্রকল্পটি। দাতা সংস্থার অনেক শর্তসমুহ সঠিকভাবে মেনে তাদের সন্তুষ্টির সাথে এবং দক্ষতার সাথে প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রকল্প পরিচালক। কিন্ত হঠাৎ করেই গতকাল উক্ত প্রকল্পের পরিচালক পদে নতুন অদক্ষ একজন জুনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন জটিল আকার ধারণ করবে বলে অনেকে মনে করছেন। প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল বারেক জানান, দাতা সংস্থার অর্থায়নে ২০২৩ সাল থেকে প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। আমি ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দক্ষতা ও সন্তুষ্টির সহিত কাজ করে আসছি। কি কারণে মাঝ পথে প্রকল্প পরিচালক বদল করা হলো আমি তা জানি না। বিষয়টি উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে ১১টি প্রকল্প পরিচালক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে এলজিইডি সূ্ত্র জানিয়েছে। গত কয়েকদিন আগে এসব প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যাদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা সবাই বিগত ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী ও ছাত্রলীগ ক্যাডার। সেখানে সিনিয়র জুনিয়রও মানা হয়নি। এছাড়াও মোটা অংকের টাকা দিলেও মিলে এলজিইডিতে প্রমোশন এরকম একটি প্রবাদ মানুষের মুখে মুখে। টাকা ছাড়া এলজিইডি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মিলে না  প্রমোশন, নিয়োগ বা পোস্টিং। আর এর সুযোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা। সেখানে ত্যাগি, মেধাবীরা বার বার হচ্ছে বঞ্চিত। এলজিইডির একজন সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বাংলাবাজারকে জানান,সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও শুধু মোটা অংকের ঘুষ দেননি বলে তাকে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়নি। তিনি জানান এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে এমন রাঘব বোয়ালরা রয়েছেন তাদের শুধু টাকা দরকার। টাকা ছাড়া সেখানে কিছু্ই হয় না। তাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এলজিইডিতে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। তিনি জানান মাঠ পর্যায়ে যেসব নির্বাহী প্রকৌশলীরা আগে পোস্টিং পেয়েছেন সবাই ছাত্রলীগ ক্যাডার। তারা মন্ত্রণালয়ে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে এখনও বহাল রয়েছেন।

আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগেই যুক্ত হচ্ছেন ৪ হাজার নতুন এএসআই