সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ তদন্তে শীর্ষ পাচারকারীরা আইনি সুযোগ নিচ্ছে
অবৈধ সম্পদ অর্জন করে মানিলন্ডারিং মামলা গুলোতে তদন্ত সংস্থাগুলোর ত্রুটিপূর্ণ দুর্বল অভিযোগপত্রের কারণে মামলায় অধিকাংশ আসামিরই আদালতে আইনি ফাঁক ফোকরের সুযোগ পাচ্ছে। গুরুতর অর্থ পাচারের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক কারণে তাড়াহুড়া করে মামলা ও অভিযোগপত্র দেয়ায় সঠিক তথ্য উপস্থাপন না করায় আদালতে প্রমাণ করা যাচ্ছে না বলে প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে।
সম্প্রতি অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির করা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে দিলীপ আগরওয়ালা, পানি জাহাঙ্গীর সহ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অনেকটা পরিপূর্ণ তথ্য দিতে পারেনি বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে করা অপরাধ তদন্ত বিভাগের কয়েকটি মামলার এজহার ও অভিযোগ পত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, দক্ষ তদারকি কর্মকর্তার মাধ্যমে আরেকটু নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান তদন্ত করলে, অভিযুক্তরা আইনি ফাঁক ফোকরের সুযোগ পেত না।
আরও পড়ুন: পুলিশে পদোন্নতি পেলেন ২৭৩ জন সাব-ইন্সপেক্টর
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আলোচিত পিয়ন পানি জাহাঙ্গীরের চারশত কোটি টাকার মালিক তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে প্রমাণ পাওয়া গেলেও সিআইডি মামলা করেছে একশ কোটি টাকা পাচারের। তাহলে বাকি ৩০০ কোটি টাকা গেল কোথায়? মামলাটি আরো নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করলে মাফিয়া পানি জাহাঙ্গীর এবং তার অর্থের উৎস অকাট্যভাবে পাওয়া যেত। বিতর্কিত ব্যবসায়ী ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদকের মামলা দেখে সিআইডি তড়িঘড়ি করে তার বিরুদ্ধে মামলা করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান শেখ গত ১২ অক্টোবর চিঠি দেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিককে। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড কোম্পানির ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কি পরিমাণ ডায়মন্ড ও গোল্ড লোকাল মার্কেট থেকে ক্রয় করেছে এর যাবতীয় রেকর্ড পত্র জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দশ বছরের এসব রেকর্ড পত্র রিপোর্ট দিতে তাদের কোন সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। জানা যায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এর পক্ষে ব্যবস্থাপক সাদেকুল হোসেন বিপুল এসব কাগজপত্র জমা দিতে ১৫দিনের সময় চেয়ে- গত ২৯ অক্টোবর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বরাবরে। কিন্তু এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর ব্যবস্থাপককে সময় দেয়া হলো কি না, এ ব্যাপারে কোন কিছুই জানানো হয়নি। এক্ষেত্রে মামলার ও তদন্তের ত্রুটি নিয়ে অন্য কথা বলছে সিআইডি। অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির মুখপাত্র পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান বলেন, মানি লন্ডারিং মামলার ক্ষেত্রে সিআইডি দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রথমত অনুসন্ধান ও পরবর্তীতে তদন্ত। কারো বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেলে মামলা করার মত এভিডেন্সের যাচাই বাছাই করে মামলা করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। কারো মৌখিক কথা বা পারসেপশন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী এভিডেন্স এর ভিত্তিতে তথ্য উপাত্ত্ব অনুযায়ী অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এভিডেন্স ছাড়া মামলা ত্রুটি বা দুর্বল করার সুযোগ নেই।





