বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস
বিশ্ববাজারে আবারও নতুন রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণের দাম। । বুধবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৪৯৫ দশমিক ৩৯ ডলার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কয়েকটি কারণে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ঝুঁকি রয়েছে। এর পাশাপাশি ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার আরও কমতে পারে—এই প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের তরুণদের কর্মসংস্থানে ১৫ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
স্পট মার্কেটে সোনার দাম ০ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪৯৫ দশমিক ৩৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে লেনদেনের এক পর্যায়ে সোনা সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫২৫ দশমিক ১৯ ডলারে পৌঁছেছে। ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সোনা ফিউচার্সের দাম ০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৪ হাজার ৫২২ দশমিক ১০ ডলারে উঠেছে।
রুপার দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৭২ দশমিক ১৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৭০ ডলার স্পর্শ করে। প্লাটিনামের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৮০ ডলারে পৌঁছায়, যা লেনদেনের এক পর্যায়ে ২ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৫০ ডলারে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমাল সরকার
পাশাপাশি প্যালাডিয়ামের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৬ দশমিক ৬৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
টেস্টিলাইভের গ্লোবাল ম্যাক্রো বিভাগের প্রধান ইলিয়া স্পিভাক বলেন, ডি-গ্লোবালাইজেশনের ধারণার কারণে মূল্যবান ধাতু এখন একটি নিরপেক্ষ সম্পদ হিসেবে দেখা হচ্ছে—যেখানে সার্বভৌম ঝুঁকি কম। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় এই প্রবণতা জোরালো হয়েছে।
তিনি বলেন, বছরের শেষের দিকে বাজারে তারল্য কম থাকায় দামের ওঠানামা কিছুটা বাড়ছে, তবে সামগ্রিক প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৬ থেকে ১২ মাসে সোনার দাম ৫ হাজার ডলারের দিকে যেতে পারে এবং রুপা ৮০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
চলতি বছরে সোনার দাম ৭০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে বড় বার্ষিক উত্থান। নিরাপদ বিনিয়োগ চাহিদা, যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার কমার প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়, ডি-ডলারাইজেশন প্রবণতা এবং ইটিএফে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে এই উত্থান ঘটেছে। বাজারে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র দুই দফা সুদহার কমাতে পারে।
একই সময়ে রুপার দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা সোনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। শক্তিশালী বিনিয়োগ চাহিদা, যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তালিকায় রুপার অন্তর্ভুক্তি এবং গতি-নির্ভর কেনাকাটা এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, সোনা ও রুপা এ সপ্তাহে যেন পুরো গতিতে ছুটছে। নতুন নতুন রেকর্ড প্রমাণ করে যে, কম সুদহার ও বৈশ্বিক ঋণঝুঁকির মধ্যে এগুলো এখনো মূল্য সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম।
অন্যদিকে, গাড়ির ক্যাটালিটিক কনভার্টারে ব্যবহৃত প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামও এ বছর বড় উত্থান দেখিয়েছে। খনি উৎপাদনের ঘাটতি, শুল্ক-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এবং সোনা থেকে বিনিয়োগ সরে আসার ফলে প্লাটিনামের দাম প্রায় ১৬০ শতাংশ এবং প্যালাডিয়ামের দাম ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।





