ব্রহ্মপুত্রে চীনের বাঁধ নির্মাণ, বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ

এশিয়ার বৃহৎ দেশ, উজানের দেশ চীন ব্রহ্মপুত্র নদের নিচের অংশে মোটামুটি আটটি পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প (এইচপিপি) নির্মাণ করছে। এর মধ্যে কয়েকটি সচল হয়েছে। অন্যগুলো নির্মাণাধীন। একটি মেগা-ড্যাম প্রকল্প রয়েছে বিবেচনাধীন। বেইজিংয়ের ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০২১-২৫) ৬০ গিগাওয়াট এইচপিপি বিষয়ক ৯ম প্রকল্প নির্মাণ করা হতে পারে তিব্বতের মোটু কাউন্টিতে গ্রেট বেন্ডে। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন এএনআই।
এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশ। তাদেরকে খুব বেশি নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক নদ-নদীর ওপর। জীবন-জীবিকার জন্য এসব নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভাটিতে বসবাস করা এসব জনগোষ্ঠীর জন্য বিষয়টি বিপর্যয়কর হয়ে উঠছে। এসব নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর অন্যতম ব্রহ্মপুত্র।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় ২৪ লাখের বেশি কলিং ভিসার কোটা উন্মুক্ত
চলার পথে বিভিন্ন স্থানে ব্রহ্মপুত্র একেক নামে পরিচিত। এর মধ্যে আছে- ইয়ারলাং সাংপো, যমুনা ইত্যাদি। এটি আন্তঃসীমান্ত বিষয়ক নদ। চলার পথে বিভিন্ন শাখার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । ভারত উপমহাদেশে সম্প্রতি ভূরাজনৈতিক সংঘাতের বড় কারণ হয়ে উঠেছে এই নদ।
চীনের পানিবিদ্যুৎ বিষয়ক আধিপত্যে কিভাবে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার একটি উত্তম উদাহরণ হতে পারে বর্তমানে মেকং নদীর অবস্থা। মানবতার জন্য ইয়ারলাং সাংপো-ব্রহ্মপুত্র-যমুনার অভিন্ন প্রাকৃতিক উৎসের পরিবর্তে জাতীয় নিরাপত্তার অস্পষ্ট বর্ণনার অধীনে এসব নদ-নদীকে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করছে বেইজিং। এসব নদীর ওপর টিকে আছে ভঙ্গুর জীববৈচিত্র্য বিষয়ক হটস্পটগুলো, বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণির আবাসস্থল।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার দখলকৃত জাপোরিঝিয়ায় ইউক্রেনের ট্রেন হামলা, নিহত সন্দেহাতীত
চীন-ভারত আলোচনার এজেন্ডায় নতুন সংযোজন নদী ইস্যু। কিন্তু দৃশ্যত নদীর এই বিপর্যয়কর ইস্যু দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার চেয়ে আরও বেশি বিদ্বেষপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পানি বিষয়ক ডাটা এবং পানির উৎসের সমতাভিত্তিক বিতরণ ইস্যু হতে পারে ভিন্নতা এবং ভুল বোঝাবুঝির। সাউথ-নর্থ ওয়াটার ট্রান্সফার প্রজেক্টের অধীনে ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পশ্চিম চীনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রেড ফ্লাগ ক্যানেলসহ তিব্বতের নদ-নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তনে বেইজিং যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে এবং এতে সন্দেহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ মানুষ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল। চীনের অবকাঠামো বিষয়ক কর্মকাণ্ড, ভূমিধস, ধাতব পদার্থের খনি এবং পৃথিবীতে বিরল পদার্থের (রিয়ার আর্থ এলিমেন্ট) অনুসন্ধানের কারণে এ অঞ্চলে নদীতে তলানি জমার ফলে নদীর মান এবং ভাটিতে তার প্রবাহের হার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনটাই সম্প্রতি দেখা গেছে সিয়াং ও কামেং শাখানদীতে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যখন তাদের প্রয়োজন নেই, তখন খুব বেশি পরিমাণে পানির প্রবাহ পেতে পারেন। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন তারা খুব কম অথবা একেবারেই পানি না পেতে পারেন। এক্ষেত্রে খুব বেশি পানি ছাড়া বা একেবারে না ছাড়া নির্ভর করে উজানে চীনের ওপর।
ডেইলি মিরর জানিয়েছে, বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো দিয়ে এই নদ বয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ-ভারত ও চীনের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে কোনো ধরনের চুক্তি নেই। আর এই নদের ব্যবস্থাপনা দুঃখজনকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
স্থানীয় মানুষ ও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের বাঁধ নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে এবং জীববৈচিত্রের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: ডেইলি মিরর