বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত এক অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গাজা সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে বহুকালীন সংঘাতের সমাধানের দিকে গুরুত্বপূর্ণ হাতছানি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘দ্য বিগেস্ট ডিল’ বলে অভিহিত করেছেন। সম্মেলনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সরাসরি উপস্থিত ছিলেন; তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ মুহূর্তে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান, কারণ একই সময়ে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব সিমখাত তোরাহ শুরু হয়। সম্মেলনে প্রায় ৩৫ জন বিশ্বনেতা অংশগ্রহণ করেন এবং আলোচনার পর গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় এবং মানবিক পুনর্গঠনের উদ্যোগে ঐক্যমত্য স্থাপনের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতারা শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর ট্রাম্প, আব্বাস, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানসহ উপস্থিতরা সমবেত ছবি গ্রহণ করেন। এরদোগান পরে প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, নেতানিয়াহুর উপস্থিতি থাকলে অনেক মুসলিম নেতা সম্মেলন বয়কট করতেন—এটি সম্ভবত নেতানিয়াহুর সফর বাতিলের একটি কারণ হিসেবে কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির আওতায় ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল
চুক্তির মূল লক্ষ্যগুলো হলো—ক্ষেত্রভিত্তিক তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, বন্দি ও জিম্মিদের বিনিময় নির্ধারণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয় তৈরি করা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তা গাজার মানুষের জীবন, অবকাঠামো পুনরুদ্ধার এবং অঞ্চলে স্থিতিশীলতার দিকে বড় ধাপ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলো চুক্তির শর্ত পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে, তাহলে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ব্যবস্থাপনা, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্গঠন সম্ভব হবে। তবে চুক্তি কার্যকর করতে মাঠ পর্যায়ে বাস্তব নিরাপত্তা ও নজরদারির ব্যাপক নকশা প্রয়োগ করা বাধ্যতামূলক হবে—এবং সেটিই এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জেন-জি বিক্ষোভে দেশ ছেড়ে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা
চুক্তি স্বাক্ষরের পরে বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তা স্বাগত জানিয়েছে; কিন্তু একই সঙ্গে তারা বলেছে—চুক্তির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষণ, ত্রাণ সরবরাহ ও আইনগত ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার স্পষ্ট রূপরেখা জরুরি। মিশরে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবায়নের সূচি, তত্ত্বাবধায়ন মেকানিজম এবং ত্রাণ-লজিস্টিক্স নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।