গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর, ঘরে ফিরছে বাস্তুচ্যুত হাজারো ফিলিস্তিনি

দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টার দিকে **ইসরাইলি সেনারা জনবহুল এলাকা থেকে সরে যায়। এরপর থেকেই দলে দলে বাস্তুচ্যুত মানুষ নিজেদের বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেছে।
উপকূলবর্তী সড়কগুলোতে দেখা গেছে মানুষের ঢল। গাজার উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ **আল-রশিদ সড়কে রাতভর অপেক্ষা করার পর সেনা প্রত্যাহারের খবর পেয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হন। তবে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা এখনো ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে—বিশেষত রাফা, খান ইউনিস, বেঈত হানুন ও ফিলাডেলফি করিডর।
আরও পড়ুন: গাজায় প্রথম দফায় মুক্তি পেলেন যারা
ইসরাইলি সেনারা সতর্ক করেছে, এসব এলাকায় প্রবেশ বিপজ্জনক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় আসছেন ড. জাকির নায়েক
এদিকে হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হায়াম এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা যুদ্ধের ‘সম্পূর্ণ সমাপ্তি’র নিশ্চয়তা পেয়েছেন। তিনি বলেন,
এখন থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে দেশি-বিদেশি সংস্থা ও রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে একযোগে কাজ করবে হামাস।
যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও স্থিতিশীলতা আনতে ২০০ সেনার একটি যৌথ টাস্কফোর্সে অংশ নেবে তারা। তবে মার্কিন সেনারা গাজায় মোতায়েন হবে না। টাস্কফোর্সে থাকবে **মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিরাও।
জানা গেছে, এই যুদ্ধবিরতি এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়*। তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ইসরাইল ও হামাস ছাড়াও মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরাইল সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং বন্দি–জিম্মি বিনিময় শুরু করবে। হামাস মুক্তি দেবে ২০ জীবিত জিম্মি ও ২৮ মরদেহ, আর ইসরাইল ছাড়বে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন।
বাড়িঘর ধ্বংস হলেও মনে আনন্দ যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ফিরে গেছেন তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘরে। কয়েক বছর ধরে তাঁবু ও আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপনের পর নিজ ভূমিতে পা রাখার আনন্দে ভরে গেছে তাদের মুখ।
৪০ বছরের ইসমাইল যায়েদা বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার ঘরটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আশপাশের সব ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও নিজের এলাকায় ফিরতে পেরে খুশি।
খান ইউনিস শহরে ফিরে আসা মানুষজন নীরবে হাঁটছিলেন ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে। কেউ কাঁধে সামান্য জিনিস বহন করছেন, কেউ ভাঙা কাঠ কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
যুদ্ধবিরতির পর মানুষ ঘরে ফিরলেও সামনে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি পুরোপুরি কার্যকর হবে কি না এবং গাজা পুনর্গঠনের ভবিষ্যৎ কী হবে—এখনো স্পষ্ট নয়। তবে গাজাবাসীর কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো নিজ ভূমিতে ফিরে আসা ও শান্তির প্রত্যাশা।