রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্বৃত্তদের মাসোয়ার পেয়ে পুলিশ নির্বিকার বাড়ছে খুন খারাপি চাঁদাবাজি ছিনতাই

নগরজুড়ে অবৈধ সিসাবার, স্পা জুয়াসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড

Any Akter
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১:৩৫ অপরাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ২:৫৬ অপরাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সুযোগ নিয়ে রাজধানী জুড়ে অলিগলিতে জুয়া, অবৈধ সিসা, নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসাসহ নানা কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্বৃত্তদের সাথে একাকার হয়ে নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোহারা নিয়ে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় না হওয়ায় পাড়ায় মহল্লায় ছিনতাই চাঁদাবাজিসহ অভিজাত এলাকায় খুন-খারাবিসহ সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন আগের মত পুলিশ কাজ করতে পারছে না, পুলিশ এখনও ট্রমাটাইজড। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র-জনতা তীব্র ক্ষোভে ভাঙচুর ও লুটপাট করে অফিসসহ অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু কয়েকদিন পরেই রাজনৈতিক ছায়ায় আওয়ামী স্থাপনাগুলো সংস্কার করে বাইরে সামাজিক ক্লাব সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ভিতরে চলে রমরমাট জুয়ার ব্যবসা।

আরও পড়ুন: বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

বাড্ডার জাগরণী ক্লাব, কালাচাঁদপুর আওয়ামী লীগ অফিস এখন বারিধারা কালা চাঁদপুর ক্লাব, কাওরানবাজার ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর মিরপুর পল্লবীসহ পুরো ঢাকাতে পরিত্যক্ত স্থাপনাগুলো সংস্কার করে ক্লাবের আড়ালে জুয়ার আসর বসে আছে। থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, উপ পুলিশ কমিশনার অফিস থেকে প্রতিদিন লোক এসে জুয়ার স্পটগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে।

আরও পড়ুন: জুলাই সনদেই আগামী নির্বাচন চায় জামায়াত-এনসিপি, বাস্তবায়ন প্রশ্নে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি

রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি কিংবা উত্তরা মিরপুরসহ অভিজাত এলাকায় দিনরাত চলে অবৈধ সিসাবারসহ অবৈধ মাদক বাণিজ্য। আড়ালে-আবডালে আড্ডা জমে ওঠে। বাইরে থেকে ক্যাফে বা লাউঞ্জের সাজে সাজানো এসব স্থান ভেতরে রূপ নেয় ‘সিসা পার্টি’র আস্তানায়। সেখানে তামাকজাত সিসা সেবনের পাশাপাশি নানা ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার হয়, এমনকি চলে অনৈতিক কার্যকলাপও। অথচ দেশে সিসা বার পরিচালনার কোনো বৈধ অনুমোদন নেই, আইন এ কার্যক্রম স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে; কিন্তু কার্যকর তদারকির বেপরোয়া সিসা বারের আড্ডা , যা তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। সকালবেলাতেই সিসা খাওয়া নিয়ে অভিজাত বনানী এলাকায় এক যুবককে পিটি হত্যা করা হয়েছে। গুলশান বনানীর অলিতে গলিতে ভবনের তলায় তলায় অবৈধ সিসা-বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার হলেও দেখার কেউ নেই। হত্যাকাণ্ডের পর এই অবৈধ কার্যক্রমের চিত্র আরও স্পষ্ট করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বনানীতে ‘৩৬০ ডিগ্রি’ নামে একটি সিসা বার থেকে বের হয়ে খুন হন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী রাহাত হোসেন রাব্বি (৩১)। তদন্তে জানা গেছে, একই স্থানে আগে “এরাবিয়ান কজি” নামে একটি সিসা বার চালু ছিল, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে বন্ধ হয়ে যা

মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে কৌশলে নতুন নামে—‘৩৬০ ডিগ্রি’—একই ধরনের অবৈধ ব্যবসা আবার শুরু হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এরাবিয়ান কজির বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দুটি মামলা করা হয়েছিল; কিন্তু মালিকপক্ষ নাম ও সাইনবোর্ড পাল্টে ফের ব্যবসা চালু করে। অনুমোদনবিহীন এসব সিসা বারে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও তারা গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী দেশে সিসা বার পরিচালনার কোনো বৈধ অনুমতি নেই। তবুও শহরের অভিজাত এলাকায় লাইটিং ও অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার আড়ালে চলে এসব বার। ঢাকায় অন্তত ১০০টির বেশি সিসা বার রয়েছে, এর মধ্যে ৫০টির বেশি গুলশান বনানীর অভিজাত এলাকায় শত শত অবৈধ স্পা ও সিসা বারে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রতিটি সিসা বাড়ির পরিচালনায় আছে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীরা।

তাদের সাথে একাকার হয়ে পুলিশ মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য দপ্তরে কর্মকর্তারা নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখল, অপকর্ম, অনৈতিক ব্যবসা বাণিজ্য ভরপুর। তরুণ-তরুণীদের আড্ডার স্থানে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর উচ্চ শব্দে বাজে মিউজিক, ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে থাকে অ্যালকোহলের গন্ধ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, এমনকি চাকরিজীবী তরুণদেরও নিয়মিত যাতায়াত থাকে এসব স্থানে। অধিকাংশ সিসা বার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, নামমাত্র খাবারের আড়ালে বসে নেশার আসর। শুধু ফ্লেভারযুক্ত তামাক নয়, সিসার সঙ্গে মেশানো হয় ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলের নির্যাস কিংবা লিকুইড কোকেন। রাজধানীর অনেক সিসা বারে মাদক সেবনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে আলাদা ‘কেবিন’। বাইরে থেকে সাধারণ বসার জায়গার মতো মনে হলেও ভেতরে পর্দা টানা বা সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ থাকে, যেখানে প্রবেশাধিকার থাকে শুধু নির্দিষ্ট গ্রাহকের। প্রতিটি কেবিন ঘণ্টাভিত্তিক ভাড়ায় দেওয়া হয়, যেখানে অতিথিদের জন্য রাখা হয় সিসা, অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদক, এরপর চলে যৌন কার্যক্রম। সিসিটিভিতে এরকম ভিডিও ফুটেজ ওরা না প্রতারণা চলছে। রাজধানীর একটি সিসা বারের কেবিনে কয়েকজন যুবক-যুবতী মাদক সেবনের প

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সিসা বার এখন শুধু ধূমপানের জায়গা নয়, বরং মাদক, যৌন ব্যবসা ও অপরাধী নেটওয়ার্কের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। বাইরে থেকে রেস্তোরাঁ বা ক্যাফের মতো সাজালেও ভেতরে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বিশ্বের অনেক দেশে সিসা বৈধ হলেও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিসা ক্যাফে চালাতে হলে সরকারি অনুমোদন ও বিশেষ লাইসেন্স নিতে হয় এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি পাইপ ও মাউথপিস একবার ব্যবহার শেষে পরিবর্তন, নির্দিষ্ট বায়ু চলাচল ব্যবস্থা এবং ১৮ বছরের নিচে কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়। স্কুল, মসজিদ, পার্ক, আবাসিক এলাকা ও হাসপাতালের ১৫০ মিটারের মধ্যে সিসা ব্যবসা করলে জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের নিয়ম রয়েছে। কাতারে সিসা পরিবেশন কেবল অনুমোদিত হোটেল ও বিনোদনকেন্দ্রে হয়, যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত তত্ত্বাবধান থাকে। সৌদি আরবে লাইসেন্স ছাড়া সিসা সরবরাহে ফৌজদারি মামলা হয় এবং প্রতিটি সেশনে ‘ট্যুরিজম ট্যাক্স’ আরোপ করা হয়। বাহরাইন, কুয়েত ও আজারবাইজানে পাবলিক স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ, সিসা সেবনের জন্য নির্দিষ্ট জোন বা কক্ষ নির্ধারণ থাকে এবং পুলিশ

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার তালিবুর রহমান জানান আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়মিত অভিযানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সিসা বার পরিচালনার কোনো বৈধ অনুমতি নেই, তাই লাইসেন্স নিয়ে চালানোর প্রশ্নই আসে না। অবৈধভাবে সিসা বার চালালে নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে সেগুলো সিলগালা করা হয়, সরঞ্জাম জব্দ করা হয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তরুণদের মধ্যে সিসার নেশা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষত নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের আসক্তি তরুণদের মধ্যে হতাশা, আত্মহত্যাপ্রবণতা ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সিসা কালচারে আসক্ত হয়ে পড়ছে, তারা মনে করছে এটি তাদের সামাজিক অবস্থান বৃদ্ধি করে। এই ভুল ধারণা থেকে তারা সিসা ও অন্যান্য মাদকে আসক্ত হচ্ছে। শুধু উচ্চবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারও এই ফাঁদে পড়ছে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং মাদক অপব্যবহার নিয়ে প্রচারণার মাধ্যমেই তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। রাজধানীর অভিজাত এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সিসা বারের অবস্থান ও পরিচালনাকারীদের পরিচয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। অনেক সময় তারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। অভিযান হলেও তা মাঝে মাঝে হয় এবং কিছুদিন পর থেমে যায়, ফলে মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ব্যবসা চালিয়ে যান। অভিজাত এলাকায় পুলিশি টহল থাকলেও রাতভর অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে নির্দ্বিধায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, সিসা বার বন্ধের এখতিয়ার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হলেও অবৈধ কার্যক্রম চললে পুলিশ অভিযান চালায়। ক্যাফেটেরিয়ার নামে সি