হিট অফিসারের হুক্কা লাউঞ্জে অভিযানে আটক ৩, বিপুল পরিমাণ সীসা মাদক উদ্ধার

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার পত্রিকা
প্রকাশিত: ৭:৫৬ অপরাহ্ন, ২০ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৭:৫৯ অপরাহ্ন, ২০ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর অভিজাত গুলশানের আলোচিত হিট অফিসার পলাতক বুশরার সিসা বারে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ হুক্কা সীসাসহ বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ মাদক উদ্ধার করেছে। আটক করেছে স্থান থেকে তিনজনকে। অবৈধ মাদক ব্যবসার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে কথিত হিট অফিসারের জামাতা জাওয়াদ ও তার পার্টনার সীসার পরিচালক অপরাধ আফরোজা সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

পুলিশ থানায় রাজধানীর গুলশান এলাকায় “দ্য কোর্টইয়ার্ড বাজার” নামের একটি লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সীসা বিক্রির অভিযোগে ১৭ জনের নামে মামলা করেছে পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ সীসা, হুক্কা ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়, ১৮ আগস্ট রাত বারোটায় পুলিশ গোপন সংবাদে গুলশান ১১২ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাসায় অবস্থিত দ্য কোর্টইয়ার্ড বাজার লাউঞ্জে অবৈধভাবে সীসা বিক্রির সময় রেজাউল করিমের নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) সবুজ কর, কনস্টেবল মো. সুজা উদ্দীন ও কনস্টেবল নাছির উদ্দীনসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালায়।

আরও পড়ুন: তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি আর্থিক সহায়তা

অভিযানে গ্রেপ্তার হন— ১। মোঃ আব্দুর রাব্বি (২৭), পিতা-মহসিন আলী,। ২। মোঃ শাকিল আহম্মদ (৩৫), পিতা-আব্দুল মালেক, বর্তমান ঠিকানা: শাহজাদপুর, মাতম্বরবাড়ী, গুলশান, ঢাকা। ও ৩। রনি মিয়া মামুন (২৭), পিতা-আবুল হেকিম, মাতা-মমতা, সাং-আমলী কেশাবপুর, নেত্রকোনা। তাদের সামনে উদ্ধার করা হয় সিসা সহ নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য। ।।  মামলার এজাহারে  জানা যায় সিসা বারের পরিচালক । আফরোজা বিনতে এনায়েত (৪৬), পিতা-খাজা এনায়েত উল্লাহ, মাতা-লায়লা আনজুমান । কথিত হিট অফিসারের আমি পলাতক ৫। জাওয়াদ (৪৫), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ৬। ম্যানেজার  আনোয়ার হোসেন (২৮), পিতা-মোঃ আইনাল, মাতা-নাছমা বেগম, সাং-ঘিনাপাড়া, লসমনপুর, শেরপুর। ৭। মোঃ রাকিব হোসেন (২৩), পিতা-মোঃ আলতাফ খোন্দকার, সাং-কিসমতপুর, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালি। ৮। অপু দিও (২২), পিতা-ইরেন্দ্র মান্দা, সাং-ভুট্টা, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ। ৯। মোঃ মিলন হাওলাদার (৩২), পিতা-হারুন হাওলাদার, সাং-দক্ষিণ ভাটারা, বেহারীপুর, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল। ১০। মোঃ মিজান (৩৬), পিতা-মোঃ রেজাউল করিম, সাং-গঙ্গহাটি, আতাইকুলা, পাবনা। ১১। মোঃ মাসুদ মিয়া (৩৭), পিতা-খোরশেদ মিয়া, সাং-আদিলপুর, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ১২। মোঃ রুবেল হোসাইন (৩০), পিতা-মোঃ শাহজাহান আলী, সাং-সাদুল্লাপুর, আতাইকুলা, পাবনা। ১৩। মোঃ রাশেদ (২১), পিতা-নাছির, সাং-কলাগাছিয়া, আমতলী, বরগুনা। ১৪। মোঃ নাঈম হাওলাদার (২৭), পিতা-মজিবর হাওলাদার, সাং-হলতা (গোপালপুর), বাকেরগঞ্জ, বরিশাল। ১৫। লিটন বাবু (৩৩), পিতা-মফিজ উদ্দীন, সাং-দেশমা, বিরামপুর, দিনাজপুর। ১৬। হোসাইন লাবিত (৪০), পিতা-আব্দুর রব, সাং-মেধাকুল, গৌরনদী, বরিশাল। ১৭। খুরশিদ মিয়া (৩৮), পিতা-মাসুদ মিয়া, সাং-আদিলপুর, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেমামলায় আসামি করা হয়েছে 

১৮ আগস্ট রাত ২৩:৫৫ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, গুলশান থানা এলাকার রোড নং-১১২, বাসা নং-২১ এ অবস্থিত “দ্য কোর্টইয়ার্ড বাজার লাউঞ্জে” অবৈধ সীসা বিক্রি চলছে। তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান থানার এসআই (নিঃ) মোঃ রেজাউল করিম, এসআই (নিঃ) সবুজ কর, কনস্টেবল সুজা উদ্দীন ও কনস্টেবল নাছির উদ্দীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামিদের আটক করেন। অভিযানে জব্দকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সীসা, হুক্কা, পাইপ, কয়লা, নগদ অর্থসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম।

আরও পড়ুন: বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

পুলিশ জানায়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এই লাউঞ্জে অবৈধভাবে সীসা বিক্রি করে আসছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর টেবিলের ৩৪(গ)/৪১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

ধৃত আসামীদের উপস্থিতিতে THE COURTYARD BAZAAR লাউঞ্জের ভেতর হতে - ১। ০৮ (আট) টি বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিকের বাটিতে সীসা – নোট ওজন ৮০০ গ্রাম, মোট সীসার ওজন ৪.৪ কেজি, মূল্য অনুমান ২৬,৪০০/- টাকা। ২। ০৩ (তিন) টি ADALYA ব্র্যান্ডের কৌটা – মোট ওজন ৩০০ গ্রাম, সীসার ওজন ২.৫ কেজি, মূল্য অনুমান ১৫,০০০/- টাকা। ৩। ০১ (এক) টি MAZAYA ব্র্যান্ডের কৌটা – ওজন ১০০ গ্রাম, সীসার ওজন ১ কেজি, মূল্য অনুমান ৬,০০০/- টাকা। ৪। ০১ (এক) টি Serbetli ব্র্যান্ডের কৌটা – ওজন ১০০ গ্রাম, সীসার ওজন ৮০০ গ্রাম, মূল্য অনুমান ৪,৮০০/- টাকা। ৫। ০২ (দুই) টি MAZAYA PREMIUM TOBACCO ব্র্যান্ডের প্লাস্টিক প্যাকেট – মোট ওজন ৪০০ গ্রাম, মূল্য অনুমান ২,৪০০/- টাকা। ৬। ০১ (এক) টি NAKHLA ব্র্যান্ডের প্লাস্টিক প্যাকেট – ওজন ৫০ গ্রাম, মূল্য অনুমান ৩০০/- টাকা। ৭। ১২ (বারো) টি ANIRDAN ব্র্যান্ডের Coconut Charcoal – মোট ওজন ১২ কেজি, মূল্য অনুমান ২,০০০/- টাকা। ৮। ০১ (এক) টি ফুয়েল পেপারের রোল – মূল্য অনুমান ৫০০/- টাকা। ৯। ০৮ (আট) টি হুক্কার পাইপ – মূল্য অনুমান ১,৬০০/- টাকা। ১০। ১০ (দশ) টি হুক্কা (সীসা সেবনের সরঞ্জাম) – সর্বমোট মূল্য অনুমান ২,০০,০০০/- টাকা। ১১। সীসা বিক্রির নগদ অর্থ ১৮,৯৫০/- টাকা জব্দ করা হয়। 

উপরোক্ত আলামত ও সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক আলোতে, সাক্ষীদের উপস্থিতিতে  রাত ১২.৩০ মিনিটে উদ্ধারপূর্বক জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ সাপেক্ষে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিরা স্বীকার করে যে, পলাতক ও অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের সহায়তায় তারা দীর্ঘদিন ধরে উক্ত লাউঞ্জে অবৈধ সীসা বার বসিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করে আসছিল। ধৃত আসামিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উক্ত মাদকদ্রব্য সীসা নিজেদের দখলে রেখেছিল।

উপরোক্ত ঘটনায় আসামিদের কার্যকলাপ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৩৬(১) এর টেবিলের ৩৪(গ)/৪১ ধারায় অপরাধের শামিল হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য উদ্ধারের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অভিযান পরিচালনাকারী এসআই মো. রেজাউল করিম জানান, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। পরে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আলামত জব্দ করা হয়।৷ পুলিশ সূত্রে জানা যায় বিগত সরকারের সময় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ের জমাতা ও তার বন্ধু সাবেক ডিবি প্রধান হারুন রশিদের সহায়তায় বাড়িতে দখল করে জোরপূর্বক শালা উপস্থাপন করে।  বাড়ির মালিক বারবার নোটিশ দিলেও বেআইনি ব্যবসা বন্ধ করেনি। পাশে স্থানীয় সরকারিকতার ও এলাকাবাসী উশৃংখল-অনৈতিক বার টি বন্ধের দাবি জানালে হুমকি দেয়া হয়।