ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:২৬ পূর্বাহ্ন, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:২৬ পূর্বাহ্ন, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় অঙ্গীকারনামা অংশে বড় পরিবর্তন আসছে। সংবিধান ও আইনের ওপরে সনদের প্রাধান্য, সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা বন্ধের অঙ্গীকার ও সনদের ব্যাখ্যা দেয়ার ক্ষমতা আপিল বিভাগকে দেয়ার প্রস্তাব থেকে সরে আসছে কমিশন। এ ছাড়া, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে না জুলাই সনদে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কেবল সুপারিশ আকারে তা সরকারকে দেবে, সরকারই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবে কোন পদ্ধতিতে সনদ বাস্তবায়ন করবে। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আলাদা সুপারিশ তুলে ধরবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বাস্তবায়ন পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশে হবে না।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহকালে মারা গেলেন সাংবাদিক

১৬ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রণয়ন করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠায়। ৩০টি দলের মধ্যে ২৮টি দল মতামত দেয়। খসড়ায় আট দফা অঙ্গীকারনামা ছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় ভাষাগত কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দ্বিতীয় দফা: প্রথমে বলা হয়েছিল সংবিধান বা আইনে যা-ই থাকুক, প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদ। এতে বিএনপি আপত্তি জানায়। সমঝোতার অংশ হিসেবে এখন রাখা হচ্ছে- যেসব সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে সনদের সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

আরও পড়ুন: ডাকসু ভোটে বিবেক দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের পরামর্শ সারজিস আলমের

তৃতীয় দফা: খসড়ায় সনদের ব্যাখ্যা দেয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা আপিল বিভাগকে দেয়ার প্রস্তাব ছিল। বিএনপিসহ আট দল এতে আপত্তি জানায়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- যা সাংবিধানিক সংশোধনের আওতায় পড়বে, তা আদালতের এখতিয়ারেই থাকবে। তাই আলাদা অঙ্গীকার রাখা হবে না।

চতুর্থ দফা: শুরুতে প্রস্তাব ছিল- সনদের বৈধতা বা জারি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। বিএনপি জানায়, আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ হলে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। সংশোধিত প্রস্তাবে রাখা হতে পারে- সনদে সই করা কোনো দল আদালতে প্রশ্ন তুলবে না।

সনদ বাস্তবায়নে গণভোট, গণপরিষদ, সংসদ, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশসহ ছয়টি বিকল্প প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি ও কয়েকটি দল গণভোটের দাবি তুললেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল সংসদ ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি মানতে রাজি হয়নি সনদ বাস্তবায়নে। এ অবস্থায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি সনদে রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

কমিশন সূত্রে জানা যায়, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিকল্পগুলো সুপারিশ আকারে সরকারকে জানানো হবে। এরপর সরকারই নির্ধারণ করবেন কোন পদ্ধতিতে সনদ বাস্তবায়ন করবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত সনদ দুই খণ্ডে প্রকাশিত হতে পারে।

প্রথম খণ্ডে থাকবে যেসব সংস্কারে পূর্ণ ঐকমত্য আছে এবং যা প্রশাসনিক আদেশ বা অধ্যাদেশে অবিলম্বে কার্যকর করা সম্ভব।

দ্বিতীয় খণ্ডে থাকবে সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজনীয় প্রস্তাব এবং যেগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে বা যেসব ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৭৩টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। বাকি ১১টি মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য হয়নি। এর মধ্যে ৯টিতে বিএনপি’র আপত্তি রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রতিটি দলের পরামর্শ কমিশন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে। সব ক্ষেত্রে আইনি ও রাজনৈতিক দিক, ভালো ও মন্দ দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কমিশন চায় তাদের পরামর্শ যেন আইনি, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে খসড়া পাওয়া গেলে আগামী মঙ্গলবার জুলাই সনদ ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনায় বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে গত রোববারের সভায় বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শসমূহ পর্যালোচনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া মতামতও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বৈঠকে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও বৈঠকে অংশ নেন।