বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার তথ্য কর্মকর্তারা
•গ্রেড-৩ স্তরে সকল পদ শূন্য
•গ্রেড-১ র একমাত্র পদ প্রধান তথ্য অফিসার ও গ্রেড-২র দুই মহাপরিচালক নিয়মিত নেই
আরও পড়ুন: প্রকৌশলী হানিফ মোহাম্মদ মুর্শিদীর অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখবে কে
রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বৈষম্যের প্রতিকারের খবর প্রায় প্রতিদিন গণমাধ্যমে লিখে যারা পাঠান তারাই বৈষম্যের নিদারুণ শিকার হয়েছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্য নিরসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ নিলেও তথ্য ক্যাডার এখনো বঞ্চনায় রয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া দুই প্রধান ছাত্রনেতা তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও তথ্য ক্যাডারের আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের কাজে একেবারেই ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তথ্য কর্মকর্তারা বৈষম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন উপায়ে শালীনতার সাথে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। তাদের দাবি, তথ্যপ্রশাসনে গতিশীলতা আনতে দ্রুত বৈষম্য নিরসন করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়োগ-বদলির ক্ষেত্রে প্রধান তথ্য অফিসার এবং গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এখতিয়ার, কিন্তু প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করে থাকে। বিভাগীয় পদ, বিশেষ করে উচ্চতর পদগুলি শূন্য থাকা ও পদায়নে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের কারণে সার্ভিসে চাপা অসন্তোষ আছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহারে সম্মতি পাকিস্তানের
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানা যায়, তথ্য ক্যাডারের আওতায় গ্রেড-১ পদ ১টি ও গ্রেড-২ পদ ২টি, সকল পদে নিম্ন গ্রেডের কর্মকর্তা পদায়িত আছেন।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার পদ গ্রেড-১, পদায়িত কর্মকর্তা গ্রেড-২ এর এবং তার পিআরএল শুরু হবে ১১ ডিসেম্বর ২০২৫। গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ গ্রেড-২, পদায়িত কর্মকর্তা গ্রেড-৩ এর এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ গ্রেড-২, পদায়িত কর্মকর্তা গ্রেড-৩ এর।
গ্রেড-৩ অনুমোদিত পদ ৫টি, ৪টি পদ শূন্য, ৫ম পদে নিম্ন গ্রেডের কর্মকর্তা পদায়িত আছেন। পদগুলো হলো মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার (প্রশাসন ও প্রটোকল), অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার (প্রেস ও মনিটরিং), অতিরিক্ত মহাপরিচালক, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং প্রকল্প পরিচালক, জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর
সম্প্রতি গ্রেড-৩ পদগুলো যেভাবে শূন্য হয়েছে :
১. অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার জনাব মো. শাহেনূর মিয়া এর ঐচ্ছিক অবসর (২৬.১০.২০২৫ খ্রি.)
২. বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক জনাব মো. কামরুজ্জামান এর অবসর (২৪.০১.২০২৫ খ্রি.)
৩. নিয়মিত গ্রেড-৩ ভুক্ত ০২ জন কর্মকর্তা গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে পদায়িত আছেন।
৪. জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের বৃহত্তম প্রকল্প হলেও এখানে কখনো নিয়মিত গ্রেডের (গ্রেড-৩) কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর মহাপরিচালক পদটি দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে শূন্য রয়েছে। সেখানে দাপ্তরিক কার্যাদিসহ বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গ্রেড-৪ পদ ৫টি, নিয়মিত লাইন পদে কর্মরত মাত্র ২ জন । এ গ্রেডে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফকেশন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি একটি দপ্তর প্রধান পদ, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অনেক নিম্ন অবস্থানের কর্মকর্তাকে এখানে পদায়িত করা হয়েছে। তথ্য অধিদফতরে সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার (গ্রেড-৪) এর ৪টি পদের মধ্যে মাত্র ২টি পদে নিয়মিত গ্রেডের কর্মকর্তা পদায়িত আছেন।
তথ্য ক্যাডারের কর্মরত সিনিয়র কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা (ব্যাচ ও নিজ গ্রেডসহ) হলো:
১. মো. নিজামূল কবীর (১৩শ ব্যাচ, গ্রেড-২), ২. খালেদা বেগম (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৩), ৩. মো. আবদুল জলিল (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৩), ৪. আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসু্দ্দিন (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৪), ৫. মুন্সী জালাল উদ্দিন (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৪), ৬. ইয়াকুব আলী (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৪), ৭. মো. জাহিদুল ইসলাম (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৪), ৮. মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৪), ৯. ম. জাভেদ ইকবাল (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৪), ১০. মোবাশ্বেরা কাদেরী (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৫), ১১. মো. মনিরুজ্জামান (১৮শ ব্যাচ, গ্রেড-৫), ১২. মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ (২০তম ব্যাচ, গ্রেড-৫), ১৩. মোহাম্মদ আলী সরকার (২০তম ব্যাচ, গ্রেড-৫), ১৪. অনসূয়া বড়ুয়া (২০তম ব্যাচ, গ্রেড-৫), ১৫. এস এম আব্দুর রহমান (২০তম ব্যাচ, গ্রেড-৫), ১৬. মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন (২০তম ব্যাচ, গ্রেড-৫) ও ১৭. ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল (২০তম ব্যাচ, গ্রেড-৫)।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফকেশন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি ক্যাডারের ৫টি দপ্তর প্রধানের পদের ১টি, জ্যেষ্ঠতার চরম লঙ্ঘন করে এখানে ১৫তম অবস্থানের কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে।





