৯৭ মিলিয়ন ডলার পাচারে সালমান রহমান ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে সিআইডির ১৭ মামলা
বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৭টি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ১৭টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—Adventure Garments, Apollo Apparels, Autumn Loop Apparels, Bextex Garments, Cosmopolitan Apparels, Cozy Apparels, Esses Fashion, International Knitwear And Apparels, Kanchpur Apparels, Midwest Garments, Peerless Garments, Pink Maker Garments, Platinum Garments, Skynet Apparels, Springful Apparels, Urban Fashions এবং Winter Sprint Garments Limited।
আরও পড়ুন: যমুনার আশপাশে এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক পিএলসি মতিঝিল শাখা থেকে এলসি (L/C) বা বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম দেখিয়ে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনেনি। রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থ দুবাইভিত্তিক R R Global Trading নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আইরল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়।
এই R R Global Trading কোম্পানির মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।
আরও পড়ুন: আরও ১৪ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ
তদন্তে আরও দেখা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৯৬,৯৬,৬৮০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা) রপ্তানি দেখানো হলেও রপ্তানির বিপরীতে অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি—যা মানিলন্ডারিংয়ের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়।
এ ঘটনায় গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মতিঝিল থানায় সিআইডি বাদী হয়ে ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে।
আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে দোহারের ২ হাজার শতাংশ জমি, গুলশানের ‘দ্য এনভয়’ বিল্ডিংয়ের একটি ৬,১৮৯ বর্গফুট ফ্ল্যাট এবং গুলশানের ৬৮/এ রোডের একটি ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ ক্রোক (জব্দ) করা হয়েছে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিদেশ গমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্রোককৃত সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে সালমান এফ রহমান কারাগারে আছেন, এবং তাঁকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া Autumn Loop Apparels Limited-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
সিআইডি জানায়, ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়—রাষ্ট্রের অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।





