‘প্রকাশ্যে এসে’ যা বললেন ফয়সাল, এখন কোথায়?
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের একটি ভিডিও বার্তা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরলেও তার বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে জনমনে তৈরি হয় কৌতূহল ও বিভ্রান্তি।
এই প্রেক্ষাপটে ফ্যাক্ট–চেকিং ও ডিজিটাল অনুসন্ধানমূলক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডিসেন্ট’ ভিডিওটি যাচাই করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নয়। ভিডিওতে দৃশ্যমান ফয়সাল করিমের চেহারা, মুখভঙ্গি ও অভিব্যক্তির সঙ্গে তার বাস্তব চেহারার পূর্ণ সাযুজ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশবিদেশের যারা ছিলেন
‘দ্য ডিসেন্ট’ জানায়, ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বিশ্লেষণসহ চারটি নির্ভরযোগ্য এআই শনাক্তকরণ টুল ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি এআই–সৃষ্ট নয়। ভিডিওর কিছু ফ্রেমে ফয়সালের থুতনির দাড়ি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রেকর্ডিংয়ের সময় ব্যবহৃত কোনো ফিল্টারের কারিগরি ত্রুটি হতে পারে, যা ভিডিওটিকে ভুয়া প্রমাণ করে না।
ভিডিও বার্তায় ফয়সাল দাবি করেন, তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তবে ‘দ্য ডিসেন্ট’ বলছে, কেবল ভিডিও দেখে তার ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। দাবির স্বপক্ষে তিনি কোনো প্রামাণ্য তথ্য—যেমন লোকেশন ডেটা বা পাসপোর্ট সিল—উপস্থাপন করেননি।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দিচ্ছেন ৩২ দেশের কূটনীতিক
হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ফয়সাল দাবি করেন, ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে তিনি ছিলেন না। এই দাবিকে সরাসরি মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘দ্য ডিসেন্ট’। প্রতিষ্ঠানটির আগের বিশ্লেষণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত অনুযায়ী, মোটরসাইকেলের পেছনে বসেই ফয়সাল করিম গুলি চালিয়েছিলেন এবং চালকের আসনে ছিলেন তার সহযোগী আলমগীর শেখ। দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া ভিডিওতে ফয়সাল অভিযোগ করেন, শরিফ ওসমান হাদি তাকে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে তদন্তে এ দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাদি জীবিত থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের কোনো অভিযোগ ছিল না; বরং তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে একটি মোটরসাইকেল থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পর, রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ধারণা করা হচ্ছে আসামিরা অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ছয়জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং চারজন সাক্ষী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।





