কোরবানি ঈদ, ব্যস্ত কামার শিল্পীরা

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:০৩ অপরাহ্ন, ০৫ জুন ২০২৪ | আপডেট: ২:১০ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েকদিন পর পালিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম উৎসব ঈদুল আযহা। একে অনেকে কোরবানির ঈদও বলে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার নামে পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু জবাই বা কোরবানি করা হয়।

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার কামার শিল্পের কারিগররা। টুংটাং শব্দই বলছে ঈদ লেগেছে কামার পাড়ায়। চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে  লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। শহর ও গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গায় কামাররা নতুন তৈরির সঙ্গে পুরনো দা-বটি, ছুরি ও চাপাতিতে সান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার মোটর চালিত মেশিনে শান দেয়ার কাজও চলছে। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। নাওয়া খাওয়া ভুলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন সব ধারালো সামগ্রী। তবে এসব তৈরিতে এখনো আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। পুরানো সেকালের নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। প্রত্যন্ত জনপদের কামাররা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো। টুংটাং শব্দটি এখন তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ। জীবন্ত কবিতা।

আরও পড়ুন: ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদনে মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। এছাড়া পরিশ্রমের তুলনায় এ পেশায় সাধারণত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তারা এ পেশার ভবিষ্যত নিয়েও এখন চিন্তিত, কারণ এ কাজের সময় আওয়াজ হয় বলে শহরে তেমন কেউ তাদের দোকান ভাড়া দিতে চায় না। 

কয়েকজন ক্রেতা জানান, কুরবানির ঈদের আর কদিন বাকি তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, কাটারির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা। লোহার পাশাপাশি স্টিলের ছুরি চাকু ও বিক্রি হয় অনেকাংশে। ঈদকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাজীপুর কালিয়াকৈরের বিভিন্ন হাট-বাজারের কামার শিল্পীরা। যতই ঘনিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ, ততই বাড়ছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন হাঁট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, কামারশালা গুলো ব্যাপকভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে। কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এসব কামারের দোকানগুলো । দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন শিল্পীরা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলে তাদের। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির মৌসুমে ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কামারদের। কয়েকজন কামার জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৪৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজি উপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন কামারদের দোকানে। আগে যেসব দোকানে দু’জন করে শ্রমিক কাজ করতো, এখন সেসব দোকানে ৩-৫ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন।

আরও পড়ুন: দুটি বুলডোজার সামনে ৩২ নম্বর আতঙ্ক উৎসুক নিরাপত্তা জোরদার

কামার দোকানদারদের অভিযোগ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও লোহার দাম বেড়ে গেছে। অপরদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেয়ার জন্য ৩৫ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ১২০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কামারদের বেচা-কেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। কয়লার দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সাহেব বাজারের কর্মকার গোপাল সরকার বলেন, সারা বছর তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির ঈদের সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। ঈদ চলে গেলে আমাদের বসে থাকতে হয়, কাজ থাকে না। এক কর্মকার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি তত বাড়ছে। বটি বানাতে আসা রহিম মিয়া জানান, আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বটি বানাতাম ২০০-৩০০ টাকা সে বটি এখন বানাতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। চাপাতি বানাতে আসা এক ক্রেতা জানান, আগের চেয়ে দাম বেশি চাচ্ছে। তারা বলছে কয়লার দাম নাকি বেশি।