এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৭০ ভরি সোনা লুটে পুলিশের চার সদস্য জড়িত

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আট মাস আগে যৌথ বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য জড়িত বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য হলেন, কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও আবু বকর। এ ছাড়া লুটের কাজে ব্যবহার করা মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালামকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখন কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন: ৪০ কেজি গাঁজাসহ বরখাস্ত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রমনা জোনের এসআই মো. ইরফান খান বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও দীর্ঘ তদন্তের ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনার রহস্য বের করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই রিপনসহ পুলিশের চার সদস্য জড়িত।
মামলার নথি, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। তার এক আত্মীয়ের বিয়েতে পুরান ঢাকার বংশালে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সাইফুল তার খালা সাজিয়া সুলতানা ও খালাতো বোন জিনাত সুলতানাকে নিয়ে উড়োজাহাজে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর তিনি পুরান ঢাকায় যাওয়ার জন্য উবারে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করেন।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে যৌথ টহল, নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসাথে মাঠে
প্রাইভেটকারটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মগবাজারের দিকে রওনা হয়। টোল প্লাজা পার হওয়ার পরপরই সাইফুলকে বহনকারী প্রাইভেটকারের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে। গাড়ি থেকে চারজন লোক নেমে প্রাইভেটকারের ভেতরে বসে থাকা সাইফুল ইসলামসহ অন্যদের কাছে নিজেদের যৌথবাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন। মুহূর্তের মধ্যে তারা সাইফুলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে সবাইকে ওই কালো রঙের মাইক্রোবাসটিতে তুলে নেন। মাইক্রোবাসের জানালার গ্লাস কালো রঙের ছিল, যেন বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরের কিছু দেখা না যায়।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম জানান, গাড়ির ভেতরে তোলার পর তাদের মারধর করে সবকিছু লুটে নেওয়া হয়। তাদের কাছে মাদক থাকার কথা বলে মামলা ও গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়। এরপর তাদের ৩০০ ফুট এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৭০ ভরি সোনা লুটের এই ঘটনা ঘটলেও মামলা করা হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। এর কারণ জানতে চাইলে মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বলেন, ভয়ে প্রথমে মামলা করিনি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিই।
মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মামলা করার পরদিন গ্রেপ্তার হন ওই মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালাম। তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ৯ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে। পরে তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশ সদস্য মিজানুরের জবানবন্দিতে উঠে আসে সোনা লুটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী এসআই রিপন সরকারের নাম।
তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইরফান খান জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কনস্টেবল মিজানুর ও আবদুস সালামকে শনাক্ত করা হয়। পরে সোনা লুটে কারা জড়িত, তাদের নাম প্রকাশ করেন মিজানুর। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরে রিপন ও আবু বকরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত আরেক কনস্টেবল হানিফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।