চিকিৎসক ও ল্যাব সংকটে খালিয়াজুরী হাসপাতাল, সেবা বঞ্চিত লাখো হাওরবাসী

Sanchoy Biswas
হৃদয় রায় সজীব, নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ন, ০৪ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১২:২৮ পূর্বাহ্ন, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নেত্রকোনার প্রত্যন্ত হাওর উপজেলা খালিয়াজুরীর একমাত্র স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিন ধরেই মানবসম্পদ ও অবকাঠামোগত সংকটে ভুগছে। জেলার সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান আশানুরূপ নয়, অথচ এই হাসপাতালই প্রায় লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসা। ১৯৯৯ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা হাসপাতালটি পরে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, বাস্তব পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতালের মোট ১০৯টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৫০টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বর্তমানে মাত্র দুজন চিকিৎসক নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। বাকিরা কেউ ছুটিতে, কেউ প্রেষণে, কেউ বা শুধুই নামমাত্র কর্মরত হিসেবে তালিকাভুক্ত।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেন, "ডাক্তার নাই বললেই চলে, সিরিয়াল দিলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।" আরেকজন বলেন, "পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছুই নাই। কিছু হলে আমাদের জেলা শহরেই যেতে হয়।"

আরও পড়ুন: কুমিল্লা সীমান্তে ৫ কোটি টাকার ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে জব্দ করেছে বিজিবি

এক্স-রে ছাড়া কোনো আধুনিক ল্যাব সুবিধা নেই হাসপাতালটিতে। ফলে সাধারণ রোগী থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও জটিলতা দেখা দিলে জেলা সদর কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেলে রেফার করা হয়, যা সময় ও খরচের পাশাপাশি ঝুঁকিও বাড়ায়। অভ্যন্তরীণ পরিবেশও জরাজীর্ণ। স্থানীয় এক নারী জানান, "শুধু নামেই হাসপাতাল, ভিতরে ঢুকলে যেন ধ্বংসস্তূপ।"

চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্স ও অন্যান্য স্টাফ সংকটও প্রকট। হাতে গোনা কয়েকজন সেবিকার কাঁধেই পুরো হাসপাতালের দায়িত্ব। একজন সেবিকা বলেন, "আমরা যতটুকু পারি, ততটুকু করছি। কিন্তু জনবল না থাকলে কি আর সব সামলানো যায়?"

আরও পড়ুন: কাপাসিয়ায় বিএনপি নেতা শাহ রিয়াজুল হান্নানের ব্যাপক গণসংযোগ

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. গোলাম মাওলা (নঈম) বলেন, "আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে জনবল সংকট কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।"

হাওরবাসীর দাবি, হাসপাতালটিতে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ, আধুনিক ল্যাব সুবিধা চালু এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংস্থান নিশ্চিত করা হোক। "চিকিৎসা কোনো দয়া নয়, এটি জনগণের মৌলিক অধিকার" এই দাবিতেই তারা মুখর।