আগুনে ছাই ইপিজেডের কারখানা, বেকার শতাধিক শ্রমিক

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) একটি আটতলা ভবন। ১৭ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে গেছে দুটি কারখানার গুদাম, যন্ত্রপাতি, সুতা, তুলা ও মূল্যবান সামগ্রী। বেকার হয়ে পড়েছেন শতাধিক শ্রমিক। চারদিকে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাঁচ, ধসে পড়া দেয়াল আর পুড়ে যাওয়া ছাদের ধ্বংসস্তূপ। দুমড়ে মুচড়ে গেছে লোহার গ্রিল—দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো ভবনের চিত্র। অথচ মাত্র দুদিন আগেও ভবনটিতে ছিল শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা।
এখন সেই প্রাণচঞ্চল ভবনটি নিস্তব্ধ। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে কারখানার একাংশ, বিপন্ন হয়েছে শতাধিক শ্রমিকের জীবিকা।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত অন্তত ৩০
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে ইপিজেডের ৮তলা ভবনের ৭ম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। টানা ১৭ ঘণ্টার চেষ্টায় শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। আগুনে ভবনের ৭ ও ৮ তলায় থাকা সুতা, তুলা, চিকিৎসা সামগ্রী, গুদামের যন্ত্রপাতি ও মূল্যবান উপকরণ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর সন্ধ্যার দিকে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। আশেপাশের কয়েকশ মিটার দূর থেকেও আগুনের তীব্র তাপ অনুভূত হচ্ছিল। থেমে থেমে ছোট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল ভবনের ভেতর থেকে। আগুনের তাপে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাছে যেতে পারেননি, দূর থেকে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে আগুন পাশের একটি তিনতলা ভবনের ছাদেও ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: রামগঞ্জে জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন: স্বর্ণের লোভে মা-মেয়েকে হত্যা
পুড়ে যাওয়া ভবনে ছিল দুটি প্রতিষ্ঠান—অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড। দুটি কারখানাতেই কাজ করতেন প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক। আগুনে কাজ হারানো শ্রমিকদের একজন শফিক আহমেদ, যিনি অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলে অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের আগুনে কারখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আমার কোনো কাজ নেই। পরিবার নিয়ে কীভাবে টিকব, বুঝতে পারছি না।”
অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলের ফিন্যান্স ম্যানেজার রিফাত হাসান গণমাধ্যমকে জানান, বেতন-ভাতা বা কারখানা পুনরায় চালু হবে কিনা—এখনও কিছুই নিশ্চিত নয়।”
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান গণমাধ্যমকে জানান, আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি পুরো ভবনটি বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো হবে। এ ধরনের আগুন যেন মালিক-শ্রমিকদের নিঃস্ব না করে, সে জন্য ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।”
অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত চীনা প্রতিষ্ঠান জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।