অনলাইন জুয়া আর মাদকে সর্বশান্ত হচ্ছে রূপগঞ্জের বিভিন্ন পেশার মানুষ

Sadek Ali
শ্রী দিপু চন্দ্র গোপ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৩৯ অপরাহ্ন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

অনলাইনে জুয়া খেলা ও মাদক সেবনে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশের নীরব ভূমিকায় সচেতন মহলের তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রূপগঞ্জের সর্বত্র এখন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া আর মাদক। সাথে রয়েছে নারীর ফাঁদ। মদ মেয়ে তাস এ তিনের সমন্বয়ে রূপগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেমে আসছে বিষাদের ছায়া। এদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে তরুণ যুবক বৃদ্ধরাসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে সাধারন মানুষ। এত কিছু ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন অদৃশ্য কারনে একেবারেই নীরব।রূপগঞ্জের মানুষ প্রশাসনের সহযোগিতায় এ অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়।

এক ক্লিকে লাখ লাখ টাকা উড়ে যাচ্ছে। কলেজছাত্র থেকে মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এতে জড়িয়ে পড়ছেন,ফুটপাতের চা দোকানি, সেলুনকর্মী, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী, ভবঘুরে, বাস-ট্রাক চালক, সিএনজি চালক, নির্মাণশ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিন মজুর অনেকেই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় অনলাইনে বাজি ধরায় ব্যস্ত থাকেন। অনেকেই শুরু হয় এক হাজার টাকা বা আরও বেশি টাকা দিয়ে। পরবর্তী পর্যায়ে তা ১০ হাজার কিংবা তারও বেশি হয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের সব সম্পদ শেষ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাসিকের শ্রমিকদের বিক্ষোভ-কর্মবিরতি

অনলাইনে হারানো টাকা জোগাড় করতে না পেরে অনেক তরুণ চুরি-ছিনতাইয়ের পথে নামছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামার পাড়া, নগর পাড়া, উত্তর পাড়া, কায়েতপাড়া, কামসাইর, বাগবাড়ী , দেইল পাড়া, নয়ামাটি, দক্ষিণ পাড়া এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। কিশোররা জোটবদ্ধ হয়ে গ্যাং গঠন করে রাতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে সর্বস্ব লুট করছে এই ধরনের ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কে আছে।

ভুক্তভোগী পথচারী আকরাম হোসেন বলেন, দক্ষিনপাড়া এলাকায় পথে কিশোর গ্যাং চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে আমার কাছে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। অচেতন অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন: শেরপুরের বারোমারি মিশনের ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫নং ওয়ার্ডের খামার পাড়া গ্রামে ১৫ থেকে ৩৫ বছরের যুবক ও কিশোর দল বেধে বিছানা বিছিয়ে ১৫/২০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে বাজি ধরে তাস ও নানা রকম গেমস খেলছে সঙ্গে চলছে মাদক সেবন। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত বলে জানা যায়।

জানা যায়, বিভিন্ন গ্রামে গোপনে গড়ে উঠেছে মাদক ও অনলাইন জুয়ার আসর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। পাশাপাশি, স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার সুযোগে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আসক্ত হয়ে পড়ছে অর্থলিপ্সা ও বিনোদনের নামে ধ্বংসের খেলায়।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এই চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিলে সমাজে পুনরায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকেরা।

অপরদিকে নিঃস্ব হওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, লোভে ও নেশায় পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছি। ধার করে খেলেছি এখন দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ টাকা দিতে চায় না। আমরা এখন সব হারিয়ে দিশেহারা। স্থানীয়রা বলছেন, এ সমস্যা কেবল আর্থিক নয়। সামাজিক নিরাপত্তা, গণপরিবেশ আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপরে প্রভাব নিয়েও বড় প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে। জনগণ ও প্রশাসনকে মিলে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ ও পূনর্বাসনমূলক উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে এটাই এলাকার মানুষের দাবি।

রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মাদক, অবৈধ নারী ব্যবসা, অনলাইন জুয়ার ব্যাপারে থানায় কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। নানা কারণে সর্বশান্তরা থানায় আসতে ভয় পায়। মোবাইলে জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা তৎপর আছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় জানান, মাদক, অনলাইন জুয়াসহ এই ধরনের অপরাধ ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা ইতিমধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি, যাতে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। একইসঙ্গে, জনগণকে সচেতন করতে প্রশাসন সভা-সেমিনার, বিদ্যালয়-মাদ্রাসায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং মানুষকে বোঝানো যে মদ, অবৈধ মেয়ে, অনলাইন জুয়া তাদের পরিবার, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।