বুয়েট ভর্তিপরীক্ষা
ভুলে ওএমআর শিট নিয়ে যান ইনভিজিলেটর, উল্টো পরীক্ষার্থীকে ডেকে অপমান তদন্ত কমিটির

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তিপরীক্ষা চলাকালে স্বাক্ষর করার সময় এক পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট (এমসিকিউয়ের উত্তরপত্র) নিয়ে গিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কক্ষের দায়িত্বে থাকা ইনভিজিলেটর। এ ঘটনার জেরে গঠিত তদন্ত কমিটির সভায় উল্টো ওই পরীক্ষার্থী ও তার মাকে ডেকে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বুশরা তাসনিম প্রিয়ন্তী খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। গত রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যমুনা সেতু অবরোধ
প্রিয়ন্তী জানান, গত ২৪ জানুয়ারি বুয়েটের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মেকানিক্যাল ভবনের ৩২২ নং কক্ষে আমার আসন পড়েছিল। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়ার পর ওএমআর শিট স্বাক্ষর করতে আসেন কক্ষের দায়িত্বে থাকা ইনভিজিলেটর। ওই শিক্ষকের নাম ফেরদৌস আলম বলে পরে জানতে পেরেছি। তিনি স্বাক্ষর করার পর ভুল করে তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে আমার ওএমআর শিটও নিয়ে যান। এ সময় আমি প্রশ্নপত্র দেখছিলাম। ফলে বিষয়টি খেয়াল করতে পারিনি। পরে ওএমআর শিট খোঁজাখুজি করে না পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, ভুল করে তিনি নিয়ে গেছেন কিনা। হাতে থাকা কয়েকটি কাগজ উল্টিয়ে তিনি নিয়ে যাননি বলে জানান। আমি ভীত হয়ে আরো খোঁজাখুজি করতে থাকি। এক পর্যায়ে তাকে আবারো জিজ্ঞেস করি। এবারে তার হাতে থাকা কাগজপত্রের মধ্যে আমার ওএমআর শিট পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে প্রায় ৫-৭ মিনিট সময় নষ্ট হয়।
প্রিয়ন্তী জানান, বুয়েটের ভর্তিপরীক্ষায় ৫-৭ মিনিট সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে আমি বুয়েট কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করি। তারা এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করে। এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে রোববার ডাকা হয়। বক্তব্য দেয়ার জন্য আমি ও আমার মা উপস্থিত হই। তদন্ত কমিটির সভায় পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল জলিল ছিলেন। আমি পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়া শুরু করলে তিনি বারবার আমাকে থামিয়ে দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে বকাঝকা শুরু করেন। না চেনার কারণে আমি মেইলে ফেরদৌস স্যারের জায়গায় অন্য একজন ইনভিজিলেটরের নাম লিখেছিলাম। এটা নিয়ে তিনি অত্যন্ত বাজে আচরণ করতে থাকেন। বলেন, তুমি একজন ‘বর্ণ লায়ার’ (জন্মগত মিথ্যাবাদী)। এ সময় আমার মা বাইরে বসা ছিলেন। পরে তাকে ডেকে নিয়েও একইভাবে অপমান করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের ‘গেট আউট’ বলে কক্ষ থেকে বের করে দেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানমের মৃত্যু
প্রিয়ন্তী বলেন, তাদের ভুলের কারণে আমার পরীক্ষায় সময় নষ্ট হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ করা আমার অধিকার। কিন্তু তারা আমাকে এবং আমার মাকে ডেকে যেভাবে অপমান করেছেন, তাতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথাও চিন্তা করছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল জলিল ওএমআর শিট নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আমাকে সেটার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখেছি যেই শিক্ষকের নামে ওএমআর নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে তিনি ওই পরীক্ষার খাতায় সিগনেচার করেন নাই। পরে যে শিক্ষক কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব ও তার খাতায় সিগনেচার করেছে তাকে ডেকে জেনেছি। অসাবধানতাবশত ওএমআর শিট ওই শিক্ষকের হাজিরা খাতার মধ্যে চলে যায়। পরে শিক্ষার্থী চাইলে তাকে দিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, তবে ওই পরীক্ষার্থীর বাকি যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো মিথ্যা। সে তার ই-মেইল ও লিখিত সরাসরি অভিযোগ পত্রেও অনেক মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তাই তার কাছে সেগুলো জানতে চাওয়া হয়েছিল।